জগন্নাথপুর সংবাদদাতা
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বন্যার কারণে প্রায় এক মাস ধরে ৭৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ, আঙ্গিনাসহ রাস্তা-ঘাটে পানি থাকায় এবং আশ্রয়কেন্দ্র খোলা থাকায় পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়। অপরদিকে চালু থাকা অপর প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতায়াতের রাস্তা-ঘাটে চলাচফেরায় বিঘিœত হওয়ায় স্কুলগুলো কমে গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। এ কারণে পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জানা যায়, ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত ১৮ জুন থেকে উপজেলায় প্রথম দফা বন্যা হয়। টানা ৮ দিন পর পানি কমতে শুরু করলেও ভারি বৃষ্টিতে ও ঢলে ফের ১ জুলাই থেকে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফের বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। এতে করে নিম্নাঞ্চাল প্লাবিত হয়ে গ্রামীণ সড়ক, হাটবাজার ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়েন দুইশতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ।
উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১২ জুন থেকে ঈদের ছুটির পর ৩ জুলাই প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার কথা থাকলেও, বন্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এ কারণে উপজেলার ১৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৫টি মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ের ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মধ্যে ১০টিতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমেও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি অভিভাবকদের। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনাসহ রাস্তাঘাটে পানি থাকায় পাঠদান চালু থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতও খুবই কম। এছাড়া বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পরীক্ষা চলামান থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
গুলবাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী মাহিমা আক্তার বললেন, গত বুধবার থেকে ষান্মাসিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সড়কে হাঁটু পানি। বিদ্যালয়ে যেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তবুও কিছু করার নেই, পরীক্ষা তো দিতেই হবে।
সাদ্দেক মিয়া নামের এক অভিভাবক জানান, গ্রামের রাস্তায় হাঁটু পানি। এতো পানির মধ্যে ছেলে-মেয়েরা বিদ্যালয়ে যাবে কি করে? দীর্ঘদিন হয়ে গেলে আবার পড়াশোনারও ব্যাপক ক্ষতি হবে। এ নিয়ে আমরা চিন্তিত।
বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা জগন্নাথপুর উপজেলা প্রাথমিক সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা রাপরুচাই মারমা জানান, এখনও বন্যা পরিস্থিতি পুরোপুরি উন্নতি না হওয়াতে অনেক শ্রেণিকক্ষে, আঙ্গিনায় ও রাস্তা-ঘাটে পানি থাকায় ৬৫ বিদ্যালয় বন্ধ আছে। এছাড়াও রয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এসব বন্ধ থাকা বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হবে। একই কথা জানালেন উপজেলা মাধ্যমিক অফিসের একাডেমি সুপারভাইজার অরূপ কুমার রায়। এ কর্মকর্তা জানান, ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে।
জগন্নাথপুরের ইউএনও আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির ফলে বর্তমানে ১৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এরমধ্যে ১২ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ রয়েছেন। বাকি ৭টি কেন্দ্রে বানভাসীদের গবাদিপশুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রাখা আছে। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আঙ্গিনায় এবং রাস্তা-ঘাটে পানি থাকায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তবে অফিস কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।