ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জের টিপরা পল্লিতে ভাঙন

13

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা

হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের টিপরা পল্লিতে ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়ি-ঘর হারিয়ে অন্য জায়গায় সরে গেছে ৫টি পরিবার। বাকি পরিবারগুলোর দিন কাটছে আতঙ্কে।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতরে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের দক্ষিণ দিকে একটি টিলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ২৮টি পরিবার শত বছর ধরে বসবাস করে আসছে। গত ছয় বছর ধরে ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ভাঙছে তাদের পল্লির টিলা।
চলতি বছর পাহাড়ি ঢলে নতুন করে আবারও ভাঙছে টিপরা টিলা। ঝুঁকিতে রয়েছে পল্লিতে যাতায়াতের একমাত্র ব্রিজটিও। এর আগে ২০২১ সালে ব্রিজটি ধসে পড়লে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন নিজ অর্থায়নে এটি সংস্কার করে দেন। পল্লির বাসিন্দা বীর দেববর্মা বলেন, ‘একসময় এই ছড়াটি খুবই ছোট ছিল। আমরা এই ছড়াতে গোসল করতাম। কিন্তু কয়েক বছর আগে ছড়া থেকে প্রচুর পরিমাণে বালু উত্তোলন হয়। এর ফলে আমাদের গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। গত ৫ থেকে ৬ বছর ধরে আমাদের গ্রাম একটু একটু করে ভাঙছে।
অনেকগুলো ঘর ও গাছ ভেঙে পড়েছে। আমাদের যাতায়াতের রাস্তা ছিল। কিন্তু এখন আর রাস্তা নেই। গ্রামে যাওয়ার জন্য ছড়ার ওপর একটি ব্রিজ আছে। এটিও যেকোনো মুহ‚র্তে ভেঙে পড়তে পারে। রাস্তা না থাকলে একটা জায়গায় বসবাস করা যায় কীভাবে বলেন?’
গ্রামপ্রধান চিত্তরঞ্জন দেববর্মা বলেন, ‘এই টিলাতে আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে বসবাস করে আসছি। এখন যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, টিলা ছাড়ার উপক্রম হয়ে গেছে। প্রতিবছরই বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে আমাদের গ্রামের টিলায় ভাঙন দেখা দেয়। এভাবে ভাঙতে থাকলে হয়তো কয়েক বছর পরে আমরা আর এই টিলাতে থাকতে পারব না। আমাদের জন্ম-কর্ম পাহাড়ের মধ্যে। এখন যদি আমরা এই টিলা ছেড়ে চলে যাই তা হলে আমরা কীভাবে বাঁচব? কী করে খাব? এখানে তো আমরা জুম চাষ করে খেতে পারি।’
গ্রামপ্রধান আরও বলেন, ‘মাত্র এক শ ফুট জায়গা। এই জায়গাতে যদি একটি গাইড ওয়াল দেওয়া হয়, তা হলেই আমাদের গ্রাম বাঁচবে। কিন্তু সরকার আমাদের টিলাটি রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমি আমাদের এমপি ব্যারিস্টার সুমন সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তিনি যেন আমাদের গ্রামটিকে রক্ষা করেন।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানা গেছে, অস্থায়ী গাইড ওয়ালের মাধ্যমে কয়েকবার এই ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই আবার তা ভেঙে যায়। পরবর্তী সময়ে ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ২০২০ সালে ৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ২৪ পরিবারের জন্য এত টাকা ব্যয়ে আগ্রহ দেখায়নি মন্ত্রণালয়। এ কারণে এখনো প্রকল্পটি ঝুলে আছে।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘যখন পাহাড়ি ঢল আসে তখনই এই ভাঙন হয়। আমরা পরিকল্পনা করছি, এই ২৪টি পরিবারকে রিজার্ভ ফরেস্টের কোনো একটি জায়গায় পুনর্বাসিত করা। যত দ্রæত সম্ভব সেটা আমরা করতে চাই।’
এদিকে শুধু টিপরা পল্লি নয়, ভাঙন দেখা দিয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন স্থানেও। এরই মধ্যে উদ্যানের ভেতরের একটি শৌচাগার ভেঙে পড়েছে। যেটি কয়েক বছর আগে ১০ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হয়।