কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদেরও যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে, সে কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দিলেন। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার সময়ে সবাই যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলেন। এমনকি যারা টিকা নিয়েছেন তাদেরও আমি অনুরোধ করব তারা সুস্থ থাকুন। স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো যেন একটু মেনে চলেন।
মঙ্গলবার স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে টানা নয়দিন মূলতবির পর শুরু হওয়া জাতীয় সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরীর মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এমন আহ্বান জানান। এই সংসদে এতজন সংসদ সদস্য হারানোকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যায়িত করে আর কোন শোক প্রস্তাব যেন নিতে না হয় সেজন্য তিনি মহান আল্লাহতা’য়ালার কাছে সকলের সুস্থতাও কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য হলো এই সংসদে একের পর এক সদস্যকে আমরা হারাচ্ছি। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক, বেদনাদায়ক। এরকম প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে শোক প্রস্তাব নিতে চাই না। আল্লাহ সবাইকে যেন সুস্থ রাখেন, সবাই ভাল থাকেন। আমাদের দেশের মানুষ এবং প্রবাসী যারা আছেন প্রত্যেকেরই মঙ্গল কামনা করি।
শোক প্রস্তাবের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও অংশ নেন বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের, বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিএনপির হারুনুর রশীদ, আওয়ামী লীগের সিমিন হোসেন রিমি, ড. আবদুস সোবহান মিয়া, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, ওয়াশিকা আয়শা খান ও নাজমা আক্তার।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী বহু গুণসম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। তার চলে যাওয়ায় সমাজে একটা বিরাট ক্ষতি হলো। দুর্ভাগ্য হলো, এই সংসদে আমরা একের পর এক সংসদ সদস্যকে হারাচ্ছি। যখনই সংসদ শুরু করলাম, দুইজন সংসদ সদস্যকে হারালাম। আবার (মঙ্গলবার) মূলতবি অধিবেশন, ঠিক কালকে (সোমবার) খবর পেলাম, তখন সত্যিই হৃদয় ভারাক্রান্ত হলো।
এমপি মাসুদা রশীদ চৌধুরীকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি অত্যন্ত বিদুষী ছিলেন। তাঁর মতো শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞানসম্মত মানুষ মেয়েদের মধ্যে কমই পাওয়া যায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করে বিদেশে পড়ালেখা করেছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ডিবেটিং ও রোভার স্কাউট সর্বক্ষেত্রে তার বিচরণ ছিল। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, সমাজসেবক ও নারী উদ্যোক্তা। খেলাধুলাসহ সকল ক্ষেত্রে নারীদের নতুনভাবে প্রেরণা যুগিয়েছেন। এরকম বহু গুণসম্পন্ন মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এটা আমাদের সমাজের জন্য বিরাট ক্ষতি। তিনি বলেন, মাসুদা রশীদ চৌধুরীর বহুমুখী প্রতিভা নারী সমাজকে প্রেরণা দেবে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও সাহস যোগাবে।
করোনা মহামারী সঙ্কটকালে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনাকালে সবাই যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলে। যারা টিকা নিয়েছেন তাদের প্রতিও অনুরোধ করব তারাও সুস্থ থাকুন। আমাদের দেশের মানুষ এবং প্রবাসী যারা আছেন প্রত্যেকেরই মঙ্গল কামনা করি। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে মাসুদা এম রশীদসহ মৃত্যুবরণকারীদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারী দলের এমপি এনামুল হক। শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পরে সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী দিনের অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিত করে অধিবেশন মূলতবি করা হয়। অধিবেশন আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় আবার বসবে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার সকালে মারা যান মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাসুদা জাতীয় পার্টির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন।