সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ ॥ গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার বীরকুলি গ্রামবাসী

59

স্টাফ রিপোর্টার :
গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের অত্যাচার ও হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তোয়াক্কুল ইউনিয়নের বীরকুলি গ্রামবাসী। গতকাল বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রামবাসীর উপর নির্মম অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরেন এলাকাবাসী।
লিখিত বক্তব্যে বীরকুলি গ্রামবাসী উল্লেখ করেন, থুবরী শিলচান জলমহালের বিরোধকে কেন্দ্র করে বর্তমানে গ্রামবাসী আজ পুলিশী অত্যাচারে নিষ্পেষিত। গ্রামের ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক থেকে শুরু করে সকল পেশার মানুষ এমনকি মহিলা ও শিশুরা পর্যন্ত গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের নির্মম নির্যাতনের শিকার। পুলিশ প্রতিদিন আমাদের গ্রামে অভিযান চালিয়ে নিরীহ মানুষ ও মহিলাদের গ্রেফতার করছে। পুলিশি ধরপাকড়ে আতঙ্কিত মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। দুধের শিশুকে বাড়িতে রেখে মা জেল কাটছেন। রোগিকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে পুলিশ গাড়ি চালককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই গ্রামবাসী প্রতিটা মুহূর্ত কাটাচ্ছেন পুলিশি আতঙ্কে।
তারা বলেন, থুবরী শিলচান জলমহালটি ২০১২ সালে ৬ বছরের জন্য ইজারা গ্রহণ করে স্থানীয় মানাউরা প্রভাতী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। ২০১৩ সালে জলমহালটি স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি সাবেক মেম্বার আব্দুল মনাফ গংরা ৪০ লক্ষ টাকায় প্রভাতী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কাছ থেকে সাব-লিজ মর্মে ক্রয় করেন। তখন সমিতির অন্যান্য সদস্য ও নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে টাকার লেনদেনও করা হয়। তখন আব্দুল মনাফ সমিতির অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতি প্রস্তাব করেন জলমহালটি সাব-লিজের চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য। কিন্তু সমিতির সাধারণ সম্পাদক তিতু রঞ্জন চালাকি করে বলেন, জলমহাল নীতিমালায় চুক্তিপত্রের কোনো বিধান নেই। এভাবেই চুক্তিপত্র না দিয়ে জলমহালটি আব্দুল মনাফ গংদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকেই জলমহালটির ভোগদখল করে আসছেন আব্দুল মনাফ গংরা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো এ জলমহালটিতে কাঁটা, কোপা, মাছের খাদ্য, পাহারাদার নিয়োগসহ যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন আব্দুল মনাফ গংরা। গত ২ নভেম্বর জলমহাল থেকে মাছ সংগ্রহ করতে গেলে আব্দুল মনাফকে বাধা প্রদান করেন প্রভাতি সমিতির সেক্রেটারী তিতু রঞ্জন, আমিরুল, আনোয়ার হোসেন, হেলাল, সামছুদ্দিন গংরা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে দুই শিশুসহ উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হয়। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় সাবেক ইউপি সদস্য ইন্তাজ আলী মেম্বার ও ইশ্রাব আলী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। তা স্বত্বেও আমিরুল গংরা তিতু রঞ্জনকে দিয়ে আব্দুল মনাফ গংদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। আব্দুল মনাফ গংদের পক্ষে রুশন আলী বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় কাউন্টার মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ রহস্যজনক কারণে একপেশে মনোভাব প্রদর্শন করছে। গত ৮ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে বীরকুলি গ্রামের মনির উদ্দিনের স্ত্রী ছালেহা বেগম ছেলে মেয়ে নিয়ে ঘুমন্ত ছিলেন। পুলিশের ডাক শুনে তিনি ভয়ে একা ঘরের দরজা খুলতে চাননি। পুলিশ ঘরের দরজা ভেঙ্গে ছালেহা বেগমের ঘরে প্রবেশ করে ছালেহা বেগমকে মারপিট করে আহত করে। পুলিশের বন্দুকের আগাতে ছালেহা বেগমের বাম হাতে মারাত্মক জখম হয়। গোয়াইনঘাট হাসপাতালে নিয়ে ১২টি সেলাই ও অল্প কিছু ঔষধ পত্র দিয়ে তাকে এসল্ট মামলায় আটক দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। সালেহা বেগমের দুধের শিশুরা তাদের মায়ের জন্য প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি করছে। এ সময় পাশের ঘরের দুই স্কুলছাত্র ও মহিলাসহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। যাবার পথে কয়েক রাউন্ড ফাকা রাবার বুলেট ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা। পরবর্তিতে সংবাদপত্রে গোয়াইনঘাটে মনাফ বাহিনীর হামলায় ওসিসহ ১৯ পুলিশ আহত শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, পরিকল্পিত ও বানোয়াট বলে দাবি করেন গ্রামবাসী।
পুলিশ এসল্ট মামলার পর থেকে পুলিশ মেতে উঠেছে ধরপাকড় বাণিজ্যে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের মামলায় ঢুকানোর ভয় দেখিয়ে ও গ্রেফতার করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, এলাকার স্বনামধন্য ব্যক্তি আব্দুল মনাফকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গায়েল করতে চায় আমিরুল বাহিনী। আব্দুল মনাফ সাবেক মেম্বার ও বিগত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি বর্তমান ইউপি আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে বীরকুলি গ্রামবাসী এলাকার প্রভাবশালী আমিরুল বাহিনীর প্রধান আমিরুল ইসলাম ও তার সন্ত্রসী বাহিনীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, এলাকার স্বনামধন্য ব্যক্তি আব্দুল মনাফকে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি এবং গ্রামের নিরীহ মানুষকে পুলিশি হয়রানী থেকে রক্ষা করতে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, সিলেটের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে গ্রামবাসীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা রুশন আলী, আজিজুল হক, ফরিদ উদ্দিন, হেলাল আহমদ প্রমুখ।