হবিগঞ্জ সংবাদদাতা
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুরে ফুটবল খেলা শেষে পুকুরে গোসল করতে নেমে মৃত দুই শিশু প্রলয় দাস (৭) ও সুর্য দাস (৬) এর শেষ ঠিকানা হয়েছে কালনী-কুশিয়ারা নদীতে।
প্রলয় দাসকে মাটি চাপা দেয়ার পরও স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির তোপের মুখে প্রলয় দাসের লাশ সন্ধ্যায় বস্তায় ভরে নদীতে ফেলতে বাধ্য হয় তার পিতা গোবিন্দ দাস। একই সাথে রুবেল দাসের ছেলে সুর্য দাসের লাশও নদীতে ফেলা হয়।
মাটি চাপা দেয়া নিজ পুত্রের লাশ না তুলতে সমাজপতিদের পায়ে পড়ে কান্না করেও মন গলাতে পারেনি মৃত শিশুর পিতা গোবিন্দ দাস।
নিহত শিশু প্রলয় দাসের পিতা গোবিন্দ দাস জানান, শনিবার ২৯ জুন দুপুরে খেলা শেষে পুকুরে গোসল করতে নেমে আমার সাত বছরের ছেলে প্রলয় ও আমার প্রতিবেশী রুবেল দাসের ছয় বছর বয়সী ছেলে সুর্য দাস পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আমি আমার ছেলেকে পাহাড়পুর মহাশশ্মানের দেয়াল সংলগ্ন মাটির নীচে সমাধি দেই। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ দাস ও কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকারসহ গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকেরা আমাকে ডেকে লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বলেন। আমি লাশ না তোলার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ উপস্থিত সবার হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও তারা আমার কথা শুনেননি। অবশেষে পঞ্চায়েত কমিটির চাপে বাধ্য হয়ে সন্ধ্যায় আমি ছেলের লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দেই।
অপর নিহত শিশুর পিতা রুবেল দাস জানান, শশ্মানে গোবিন্দ দাসের ছেলের লাশ সমাধিতে বাঁধার বিষয়টি জানার পর বাধ্য হয়ে আমার ছেলে সুর্যের লাশ বস্তায় ভরে নদীতে ফেলি।
গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকার বলেন, গ্রামের কমিটির সিদ্ধান্ত হল শশ্মানের পরিবেশ পরিষ্কার রাখার জন্য পাশে কোনো সমাধি করা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত এলাকার সবার, আমার একার নয়।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ সরকার বলেন, এটি আমার একার সিদ্ধান্ত নয়, গ্রাম কমিটির সবার সিদ্ধান্ত। বদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুসেনজিৎ চৌধুরীর মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। ঘটনাটি অমানবিক। শশ্মান তো মানুষের সৎকারের জন্যই। এখানে সমাধিত করা হলে শশ্মানের পরিচ্ছন্নতার বিষয় কেন আসবে।
আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.ডালিম আহমেদ বলেন, এ বিষযে খোঁজ নিয়ে দেখছি। অভিযোগ পেলে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।