কাজির বাজার ডেস্ক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অর্থাৎ চলতি মাসেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। অন্যদিকে রাজপথে বিরোধীদের এক-চুলও ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ক্ষমতাসীন দল ও সরকার। এ অবস্থায় চলতি অক্টোবর মাসে সহিংসতার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রয়োজনীয় উপকরণসহ প্রস্তুতিও সেরে রেখেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টির আগেই মানুষের জানমাল রক্ষায় পুলিশের এই আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো হতে পারে বলে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে। এ-সংক্রান্ত গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে গত মাসে পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার বৈঠকও করেছেন। রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক থাকতে এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে গত ২১ সেপ্টেম্বরে এক চিঠিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এক মাসের’ জন্য সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। পুলিশের এই ইউনিটগুলোর মধ্যে আছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও পুলিশ লাইনসের ২০০ জন করে ফোর্স।
তবে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) এনামুল হক সাগর বলেন, শুধু বর্তমান কোনো পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নয়, পুলিশ যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে।
পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে নির্দেশ গেলেও রাজধানীর প্রতি বিশেষ নজর রেখে প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকাকেন্দ্রিক পুলিশের ইউনিটগুলো। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রস্তুতি হিসেবে ব্যারাকে থাকা প্রতিদিন ছয় শতাধিক সদস্যকে দুই শিফটে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। তাঁদের সবাই নির্দেশ পাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে যেতে প্রস্তুত থাকছেন। সঙ্গে যোগ হবে পুলিশের অন্য ইউনিটগুলোও।
কর্মকর্তার বলছেন, যেকোনো আন্দোলনে সব পক্ষের লক্ষ্য থাকে রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। আগের বিভিন্ন বড় আন্দোলনকালেও এমনটা দেখা গেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ডিএমপিকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডিএমপির মুখপাত্র ও উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, চলতি মাসকে কেন্দ্র ঢাকা মহানগর পুলিশ ব্যাপক তৎপর রয়েছে। ডিএমপির অভ্যন্তরীণ একটি গোয়েন্দা ইউনিট মাঠে কাজ করছে। আরেকটি দল মাঠে নামতে ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা কাজ করবে।
জানা যায়, একই বার্তা পৌঁছে গেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও। নিজেদের প্রস্তুতির বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় খবর নেওয়া হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত একটি রিপোর্টও সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এর বাইরে নির্বাচনকেন্দ্রিক পুলিশের নিয়মিত কাজও চলমান। এপিবিএন সদস্যদের প্রতি জারি করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত এক মাসের জন্য এপিবিএনের ৩৫০ জনের দল প্রস্তুত রাখতে হবে। নির্দেশনায় এপিবিএন দলের দায়িত্ব পালনের জন্য জ্বালানি, চালকসহ প্রয়োজনীয় যানবাহন এবং অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত রাখতেও বলা হয়েছে।
এপিবিএন সূত্রে জানা যায়, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত এপিবিএনের ওই ৩৫০ সদস্যের দলকে নির্দেশ পাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে দায়িত্ব পালনের জন্য বেরিয়ে পড়তে হবে। এমন প্রস্তুতির বিষয়ে এপিবিএনের পুলিশ সুপার (প্রশাসন) বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে এই ফোর্স স্ট্যান্ডবাই রাখতে বলা হয়েছে। এর কারণ তিনি জানেন না। এপিবিএনের এক সদস্য জানান, শনিবার এক জরুরি বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রæত ঘটনাস্থলে যেতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। দিনের দুই ভাগে দুটি দল সব সময় প্রস্তুত থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, আন্দোলনরত দলগুলোর কাছে চলতি মাসটি গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে তারা সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করবে। সরকার চাইবে পরিস্থিতি অনুক‚লে রাখতে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই জনস্বার্থে পুলিশ এমন প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে পারে।