সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের দু’টি ছাত্রাবাস থেকেও নেই

8

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
জেলার সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ। পাঁচ বছর আগেও এই প্রতিষ্ঠানের দুটি ছাত্রাবাস ছিল। একটি কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতি ছাত্রাবাস অন্যটি বীর মুক্তিযোদ্ধা তালেব ছাত্রাবাস। দুটি-ই এখন নেই। একটি পরিত্যক্ত। আরেকটি হয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাস। ছাত্রীনিবাস প্রয়োজন রয়েছে। তবে ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া দুঃখজনক। কলেজে ছাত্রদের আর আবাসনের কোনো সুযোগ নেই।’ আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে।
পরিমল কান্তি দে জানালেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে কলেজের কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতি ছাত্রাবাসটি পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আরেকটি ছাত্রাবাস ছিল মুক্তিযুদ্ধে শহীদ কলেজের শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা তালেবের নামে। এটি এখন ছাত্রীনিবাস। দ্রæতই কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতি ছাত্রাবাস ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ তালেব ছাত্রাবাস নামে দুটি আধুনিক ছাত্রাবাস নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রজত কান্তি সোম মানস জানালেন, চলতি বছরের ৭ মে প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে চিঠি পাঠিয়ে কলেজে ছাত্রাবাস নির্মাণের আবেদন জানানো হয়েছে। তিনি জানান, প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী কলেজটিতে অধ্যয়নরত। কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী হাওরাঞ্চলের। শহরে থাকার জায়গা না থাকায় এসব শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন দোলন বলেন, শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে দরিদ্র ছাত্ররা অপেক্ষাকৃত কম খরচে থাকার ব্যবস্থা করতে ছাত্রাবাসের প্রয়োজন রয়েছে। ছাত্রাবাস হলে রাজনৈতিক কার্যক্রমেও ছাত্রদের উপস্থিতি বাড়বে। যেমনটা ছিল ’৯০ দশকের স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে। সুনামগঞ্জ শহরে তখন কলেজের ছাত্রাবাসে থাকা ছাত্ররাই আন্দোলন জমিয়ে রাখতেন।
কলেজের সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট মনিষ কান্তি দে মিন্টু বলেন, কলেজের নিজস্ব আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা অধিক খরচ করে মেস করে বা বাসা ভাড়া করে থাকছে। দিনে পাঁচটা-ছয়টা টিউশনি করতে হচ্ছে তাদের। কেউ তাদের খোঁজ রাখে না। কলেজের ডিগ্রি পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, দিরাইয়ের প্রত্যন্ত গ্রামে তার বাড়ি। টিউশনি করেই পড়াশোনা করছেন। কলেজে ছাত্রাবাস থাকলে খরচ কম হতো। এতে টিউশনি কম করে পড়াশোনায় বেশি মনোযোগ দিতে পারতেন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দীপংকর কান্তি দে বলেন, ছাত্রাবাসের দাবি জানিয়ে ঊর্ধ্বতনদের স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছেও এ বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই কথা জানালেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন।
ছাত্রদলের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিএনপি শাসনামলে দুটি ছাত্রাবাস ছিল, এখন নেই। আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী পারভেজ ইষেণ বলেন, ‘ছাত্রাবাসের মতো বড় প্রকল্পের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর শরণাপন্ন হতে হয়। আমরা এ ধরনের কোনো প্রকল্প প্রস্তাবনা দেইনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছে; কিন্তু এত বড় প্রকল্প আমরা লিখলেই হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এ বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চাইলে, আমরা চাহিদার কথা জানাব।