মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে টেস্ট র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ৮ নম্বর থেকে ৯ নম্বরে নেমে যাওয়ার খবরটা ঢেকে দিল দেশের নারী ক্রিকেটাররা। মেয়েদের এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ দল এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। নেদারল্যান্ডসের উট্রেক্টে বাছাই পর্বের ফাইনালে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছে ২৫ রানে। অবশ্য আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই প্রথম জয় নয় বাংলাদেশের মেয়েদের। কয়েক দিন আগেই সেখানে সিরিজ জিতেছে আমাদের মেয়েরা। এশিয়া কাপ শিরোপা ও আয়ারল্যান্ডে সিরিজ জয়ের পর এখন বলা যেতেই পারে নতুন গতি পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্যের রথ। ক্রিকেটে মেয়েদের নিকট-অতীতের খেলাগুলোর দিকে তাকালেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের ছেলেরা দুটি এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে। খেলেছে তিনটি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনাল। কিন্তু ট্রফি জেতা হয়নি তাদের। মেয়েদের ক্রিকেটেও সাফল্যখরা ছিল। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ফাইনাল খেলায় এই আয়ারল্যান্ডের কাছেই মেয়েরা হেরেছিল ২ উইকেটে।
মেয়েদের ক্রিকেটে সাফল্য তো আরো কম। অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের মেয়েদের পথচলা খুব বেশি দিনের নয়। আইসিসি মেয়েদের ক্রিকেটে জোর দেওয়ায় বিসিবিও মেয়েদের ক্রিকেটকে গুরুত্ব দিতে শুরু করে ২০০৬-২০০৭ সাল থেকে। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব চলাকালে দেশের মেয়েরা পায় ওয়ানডে স্ট্যাটাস। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয় পায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই প্রথম টি-টোয়েন্টির জয় ২০১২ সালে। জয়ে যাত্রা শুরু হলেও তা নিয়মিত হয়নি। মেয়েদের ক্রিকেটকে বরাবরই অবহেলার চোখে দেখা হয়েছে। অনেক সময় নিয়মিত খেলাও ছিল না। হতাশার সঙ্গেই বলতে হয়, মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি ভাবা হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচি দায়সারা। আছে মাঠের সংকট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সুনির্দিষ্ট কোনো সূচি নেই। ট্রেনিং, ক্যাম্প, অনুশীলনের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়। জাতীয় লিগে মাত্র ৬০০ টাকা ম্যাচ ফি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হলেও তা বাড়েনি। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা মেয়ে ক্রিকেটারদের বেতনও উল্লেখ করার মতো ছিল না। এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের সংবর্ধনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পারিবারিক বাধা, সামাজিকতার চোখ রাঙানি, শারীরিক ও মানসিক সীমাবদ্ধতা সব মিলিয়ে এক কঠিন বাস্তবতাকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের মেয়েরা। ক্রিকেটে মেয়েদের এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে। তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে উৎসাহ দিতে হবে। বিশ্বকাপেও তাদের সাফল্য কামনা করি আমরা।