স্পোর্টস ডেস্ক :
বিপিএল ইতিহাসে আরেকটি নতুন চ্যাম্পিয়ন দল মিলে যাচ্ছে। তা নিশ্চিত। আজই তার ফয়সালা হয়ে যাবে। ফাইনালে খুলনা টাইগার্স ও রাজশাহী রয়্যালসের মধ্যকার লড়াইয়ে যে দলই জিতুক, তারাই বিপিএলে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতবে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) এবারের আসরের এই শেষ ম্যাচ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ রাত সাতটায় শুরু হবে। দেশী অধিনায়কের হাতে শিরোপা শোভা পাবে, নাকি বিদেশী অধিনায়কের হাতে? খুলনার দেশী অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম শিরোপা উঁচিয়ে ধরবেন, নাকি রাজশাহীর বিদেশী অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেল? খুলনার প্রাণভোমরা মুশফিক। এর আগে কখনই বিপিএলের শিরোপা হাতে তুলে ধরার স্বাদ পাননি তিনি। এমনকি ফাইনালেও খেলেননি। এবার দাপটের সঙ্গেই ফাইনালে খেলছে খুলনা। সেই দলের অধিনায়ক আবার মুশফিক। দেশী অধিনায়ক। বরাবরই বিপিএলে দেশী অধিনায়কের হাতেই শিরোপা দেখা গেছে। এর আগে ছয়বারের বিপিএলে চারবার মাশরাফি বিন মর্তুজা, একবার সাকিব আল হাসান ও একবার ইমরুল কায়েস শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে দুইবার, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে একবার ও রংপুর রাইডার্সের হয়ে একবার শিরোপা জিতেন মাশরাফি। ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে একবার সাকিব ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে একবার ইমরুল চ্যাম্পিয়ন হন। কিন্তু এবার সপ্তম আসরে কী মুশফিক পারবেন সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে?
মুশফিক কখনই বিপিএলের ফাইনালে খেলার স্বাদ না পেলেও আন্দ্রে রাসেল এর আগে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলেছেন। সর্বশেষ আসরেই ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে ফাইনালে খেলেছেন। তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পাননি। এমনকি কোন বিদেশী ক্রিকেটারই দেশী অধিনায়কদের হাতের মুঠোয় থাকা শিরোপা কেড়ে নিতে পারেননি। এর আগে ২০১২ সালে প্রথম বিপিএলে বরিশাল বার্নার্সের অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জয়ের সুযোগ পান অস্ট্রেলিয়ার ব্রেড হজ কিন্তু মাশরাফির কাছ থেকে শিরোপা নিতে পারেননি। ২০১২ সালের বিপিএল শুরুর সাত বছর পর আবার দেশী অধিনায়কের সঙ্গে বিদেশী অধিনায়কের শিরোপা উঁচিয়ে ধরার লড়াইও হবে। এবার কে সেই স্বাদ পান, সেদিকেই সবার নজর থাকছে। তবে দুই দলই যে ভয়ঙ্কর তা তো আগেই বোঝা গেছে।
লীগপর্বে দুই দল পরস্পরের বিরুদ্ধে দুইবার লড়াই করে। একবার রাজশাহী, আরেকবার খুলনা জিতে। তবে পয়েন্ট তালিকায় ১২ ম্যাচ খেলে ৮ জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়েই খুলনা সবার শীর্ষে থাকে। সমান ম্যাচে সমান জয়ে সমান পয়েন্ট পেয়ে রানরেটে পিছিয়ে থেকে রাজশাহী থাকে দ্বিতীয় স্থানে। ‘প্লে-অফে’ গিয়ে আবার খুলনাই জিতে। প্রথম কোয়ালিফায়ারে ২৭ রানে রাজশাহীকে হারিয়ে খুলনা ফাইনালে সবার আগে উঠে যায়। বিশেষ করে দলটির পেসার মোহাম্মদ আমির তো ১৭ রান খরচায় ৬ উইকেট নিয়ে বিপিএলের সেরা বোলিং করে ম্যাচ জিতিয়ে দেন। আমিরের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ, রবি ফ্রাইলিঙ্ক তো আছেনই। যদি বোলিং ধারাবাহিকতা বজায় থাকে আর ব্যাটিংয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর ঝলকানি, মিরাজের দ্যুতি, রাইলি রুশো, মুশফিক, নজিবুল্লাহ জাদরান, ফ্রাইলিঙ্কের ব্যাটিং তা-ব মিলে যায় তাহলে রাজশাহীর স্বাভাবিকভাবেই আবারও খবর আছে। তবে রাজশাহীও যে কম নয়।
দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে চট্টগ্রামের ক্রিস গেইল ঝড় তুললেন। তাতেও ঘাবড়ে যাননি তারা। ঠিকই সময়মতো গেইলকে আউট করে দিয়ে ম্যাচ শেষ পর্যন্ত জিতে নেয়। আন্দ্রে রাসেলের ব্যাটিং তা-বে ২ উইকেটে জিতে ফাইনালেও ওঠে। আজও যদি মোহাম্মদ ইরফান, শোয়েব মালিক, আন্দ্রে রাসেল, মোহাম্মদ নাওয়াজ, আফিফ হোসেন ধ্রুবর বোলিং ঝলক মিলে যায়। সঙ্গে লিটন কুমার দাস, আফিফ, মালিক, রাসেলের ব্যাটিং ঝড় মিলে, তাহলে খুলনার চ্যাম্পিয়ন হওয়া কঠিনই হবে।
এখন দেশী অধিনায়করাই যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, সেই ধারা বজায় থাকলেই হলো। তবে রাসেল যে আবার হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, ‘উদযাপন করার জন্য আমি তাড়াহুড়া করতে চাই না। কারণ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ (ফাইনাল) ম্যাচ আছে। আমি সেই ম্যাচের (ফাইনাল) পরই পার্টি করতে চাই।’ রাসেলের হুঙ্কার সত্যি প্রমাণ হলে তাতে খুলনা তলিয়ে গেলে প্রথমবারের মতো বিদেশী ক্রিকেটার অধিনায়ক হয়ে বাজিমাত করতে পারেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর নাম প্রথমবার যুক্ত করে বিপিএল হচ্ছে। এখন এই বিপিএলে খুলনা না রাজশাহী চ্যাম্পিয়ন হয়, নতুন চ্যাম্পিয়ন কোন দল হয়, সেদিকেই দৃষ্টি থাকছে সবার।