সড়কে মৃত্যুর মিছিল রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি

10

 

সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ, তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সম্প্রতি গোয়াইনঘাটে একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আর এই ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে সুন্দ্রাগাঁও পিয়াইনগুল কলিমুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আমরা বলতে চাই, যখন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। বিবেচনায় নেওয়া দরকার, এর আগেও বারবার এমন বিষয় সামনে এসেছে, বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
লক্ষণীয়, এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আটোরিকশাটি যাত্রী নিয়ে সিলেটের দিকে আসছিল; আর মাইক্রোবাসটি ভোলাগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের ওই এলাকায় সামনের চাকা পাংচার হলে মাইক্রোবাসটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। তখন বিপরীত দিক থেকে আসা অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংষর্ঘ হয়। এতে দুই বাহন ছিটকে রাস্তার পাশে ডোবায় গিয়ে পড়ে; ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার চালক এবং এক নারীসহ চার আরোহীর মৃত্যু হয়। আর হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুই জন ও হাসপাতালে মারা যান আরও একজন। গোয়াইনঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জানিয়েছেন, মাইক্রোবাসের চাকা বস্নাস্ট হয়ে সিলেটগামী সিএনজি অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনা হয়।
আমরা বলতে চাই, যখন মুখোমুখি সংঘর্ষে এমন ভয়ানক ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল, তখন এটি আমলে নিতে হবে। এ ছাড়া মনে রাখা দরকার, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করাসহ বিভিন্ন কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমন আলোচনাও বারবার উঠে এসেছে। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।
স্মর্তব্য, এর আগে সড়ক দুর্ঘটনার ডজন দুয়েক কারণ চিহ্নিত করা হলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় বিষয়টি সামনে এসেছিল। একদিকে মৃত্যুর মিছিল থামছে না, অন্যদিকে সড়কে লাশের সারি দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এটাও এড়ানোর সুযোগ নেই, গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সড়কে মৃত্যু কমছে না। একই সঙ্গে পথচারী ও যানবাহন চালকদের অসচেতনতা, যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি পরিচালনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করেন তারা।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এবারের দুর্ঘটনাটি আমলে নিন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করুন। মনে রাখা জরুরি- বিভিন্ন সময়েই দুর্ঘটনার কারণ আলোচনায় এসেছে। এমনকি নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। নানা প্রতিশ্রম্নতি সত্তে¡ও সড়ক নিরাপদ হয়নি। এ ছাড়া এটাও এড়ানোর সুযোগ নেই- দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে তা আমলে নিতে হবে এবং দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।