আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে দীর্ঘ হচ্ছে নতুন প্রকল্পের তালিকা

7

কাজির বাজার ডেস্ক
আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে দীর্ঘ হচ্ছে নতুন প্রকল্পের তালিকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নতুন এডিপিতে যুক্ত করা হবে ৮২৫টি অনুমোদনহীন প্রকল্পের নাম। অর্থবছরজুড়ে এগুলো থেকেই অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে এর আগের অর্থবছরগুলোতে এত বেশি প্রকল্প তালিকায় ছিল না। নতুন এডিপি পর্যালোচনা করে পাওয়া গেছে এমন চিত্র।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন-এটি নির্বাচনি অর্থবছরের এডিপি। তাই এমপিদের প্রতিশ্রæতি এবং ভোটারদের সন্তুষ্ট করতে নানা প্রকল্প থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বাস্তবতা বিবেচনা করে রাজনৈতিক প্রকল্প যত কম নেওয়া যায় ততই ভালো। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির সংকট এখনো কাটেনি। শিগগিরই কেটে যাবে এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে সংকট থাকবে। এ অবস্থায় সরকারি ব্যয় যেটা না করলেই নয় সেটি করা উচিত। যেসব ব্যয় না করলেও চলে সেসব করাটা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব প্রকল্প সরকারি ব্যয়ের দরজাটা খুলে দেবে। সরকারের জন্য পরবর্তীতে চাপ সৃষ্টি হবে। মন্ত্রণালয়গুলো বলবে এটা সবুজ পাতায় আছে কাজেই সাদা পাতায় নিতে সমস্যা কি। তখন পরিস্থিতি ঠেকানো কঠিন হবে। তাই ঢালাওভাবে নতুন প্রকল্প না নিয়ে পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার। যেসব প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থায়ন আছে এসব বেশি নেওয়া দরকার।
জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এডিপিতে নির্বাচনের কোনো প্রভাব পড়েনি। আমরা কৃচ্ছ সাধনকেই গুরুত্ব দিয়েছি। তবে আওয়ামী লীগ সরকার গণতান্ত্রিক সরকার। ফলে যা কিছুই করে তা জনগণের সন্তুষ্টির জন্যই করে। বছরের অন্য সময়ও যেসব প্রকল্প নেওয়া হয় সেগুলোও জনতুষ্টির জন্যই। কারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হয়। জনগণের মঙ্গলকে সব সময় প্রাধাণ্য দিতে হয়। এখানে নির্বাচন বড় বিষয় নয়।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দহীন অননুমেদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ৮২৫টি। এর মধ্যে অধিকাংশই বিনিয়োগ প্রকল্প। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের এডিপিতে এই তালিকায় নতুন প্রকল্প ছিল ৬৩৩টি। সে হিসাবে আগামী অর্থবছর প্রকল্প বাড়ছে ১৯২টি। এছাড়া এ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এমন প্রকল্প আছে ৪০২টি। এ হিসাবে আগামী অর্থবছর নতুন প্রকল্প বাড়ছে ৪২৫টি। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প ছিল ৪৬৭টি। তারও আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এমন প্রকল্প ছিল ৪৮৯টি। আগামী অর্থবছর নির্বাচনের কারণে প্রকল্প বেড়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বুধবার পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন এটা ঠিক নয়। এখন সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম অনেক বেড়েছে। আগে এক সময় এডিপির আকার ছিল ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। তাহলে প্রকল্প সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এছাড়া এসব প্রকল্প তো এক বছরের মধেই অনুমোদন পাবে এমন বিষয় নয়। কেননা এই তালিকা ধরে প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে দেখা যাবে নানা ধাপে এসব অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এতে অনেকটা সময় চলে যাবে। এই তালিকায় থাকার অর্থ হচ্ছে এগুলো অনুমোদন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপে আছে। তবে এটা ঠিক যে এই তালিকার বাইরে নতুন কোনো প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হবে না। প্রকল্প নির্ধারণে নির্বাচনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। নতুন প্রকল্পের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগামী অর্থবছরের যেসব অনুমোদনহীন প্রকল্প যুক্ত করা হচ্ছে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রকল্প আছে গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতে ১৩৩টি। এরপরই আছে কৃষিতে ৯৬টি, পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে ৮৬টি এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ৬৭টি। আরও আছে শিক্ষা খাতে ৬২টি, সামাজিক সুরক্ষা খাতে ৪৬টি, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে ৩২টি, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদনে ৬২টি, স্বাস্থ্যে ৪০টি, পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদে ৫০টি এবং এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে রয়েছে ১৭টি প্রকল্প। এছাড়া শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৬৫টি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় ৪৪টি, প্রতিরক্ষায় ১৭টি এবং সাধারণ সরকারি সেবা খাতে আটটি প্রকল্প রয়েছে।