সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
কেক কাটা, আলোচনা ও সংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে সুনামগঞ্জের পঞ্চরতœ বাউলের মধ্যমণি গানের সম্রাট বাউল কামাল পাশার ১১৮ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেল ৩ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আব্দুল হাই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জন্মবার্ষিকীর আলোচনায় প্রধান অতিথিরক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নুরুল হুদা মুকুট। বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ এর উপদেষ্টা যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এন.এম মাহমুদুর রসুল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এডভোকেট চান মিয়া, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেরগুল আহমদ, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল, রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক এমরানুল হক চৌধুরী। বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ এর সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শংকর রায়, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট দেবদাস চৌধুরী রঞ্জন, জেলা গীতিকার ফোরাম এর সভাপতি বাউল শাহজাহান সিরাজ, সাধারণ সম্পাদক অরুন তালুকদার, পদক্ষেপ এনজিও সংস্থার এরিয়া ম্যানেজার গোলাম এহিয়া, ফেনী জেলার এরিয়া ম্যানেজার মোঃ মুজিবুল হক আকন্দ ও ব্যবসায়ী ফারুক আহমদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার পরে কামালগীতি পরিবেশন করেন বাউল কল্যাণ পরিষদের সভাপতি জ্ঞানসাগর দূর্বিণ শাহের শিষ্য বাউল তছকীর আলী, সুর সম্রাট ক্বারী আমির উদ্দিনের শীষ্য বাউল এলকাছ দেওয়ান, গানের স¤্রাট বাউল কামাল পাশার শীষ্য বাউল আলাউদ্দিন, বাউল নিউ শফিকুননূর, বাউল মজনু পাশার শীষ্য বাউল আমজাদ পাশা, বাউল কাইয়্যুম পাশা, আয়োজক গীতিকার বাউল আল-হেলাল, ক্বারী আমিরুল ইসলাম, গীতিকার নির্মল কর জনি, শিশু শিল্পী মেহেদী হাসান সৌরভ ও আবুল খায়েরসহ স্থানীয় শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে যন্ত্রশিল্পীদের মধ্যে বাঁশীতে কণু বাবু, ঢোলে ইকবাল হোসেন, বেহালায় এলকাছ আলী ও মন্দিরায় শিস্তার আলী সহযোগিতা করেন। রাতব্যাপী অনুষ্ঠানে “দীন দুনিয়ার মালিক খোদা এত কষ্ঠ সয়না তোমার দিল্কি দয়া হয়না’ “চাইনা দুনিয়ার জমিদারী কঠিন বন্ধুরে”, “সাজিয়ে গুজিয়ে দে”, “কাঙ্কের কলসী জলে গিয়াছে ভাসি” নৌকা আগে আগে চলেরে ঐ নৌকাটা শেখ মুজিবের ও ‘প্রেমের মরা জলে ডুবেনা’ সহ প্রায় ৫০টি কামালগীতি গান পরিবেশন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট বলেন, শুধু গান রচনাই নয় ঐতিহাসিক নানকার আন্দোলন,৪৭ এর গণভোট আন্দোলন, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪‘র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৭০ এর পাকিস্তান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে হাওরাঞ্চলে গণ সংযোগে আগত আওয়ামীলীগ প্রধান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভামঞ্চে নৌকার পক্ষে গণসঙ্গীত পরিবেশন এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাট ও সেলা সাবসেক্টরের বিভিন্ন মুক্তিফৌজ ক্যাম্পে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করে জাগরণী গান পরিবেশনের পাশাপাশি গানের স¤্রাট কামাল পাশা, স্বাধীকার স্বাধীনতা ও স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে নিরলস শ্রম সাধনা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি নিজের জন্য কিছুই করেননি। যা করেছেন সবি দেশ জাতি ও সমাজের জন্য। বাউল শাহ আব্দুল করিম, দূর্বিণ শাহ ও পন্ডিত রামকানাই দাশের অগ্রজ এই লোকশিল্পী কে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করার জন্য দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার কর্তৃক জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে ৭ বার প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হলেও আজও এই শিল্পী পাননি রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি। তাই বাউল কামাল পাশার মতো একজন গুণী শিল্পীর স্বীকৃতি আদায়ে জেলার সকল সংস্কৃতিসেবীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন,এটা আল-হেলালের একার কাজ নয়, এ রকম ভাল কাজে সকলকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। বাউল কামাল পাশার গান প্রকাশনা ও তাঁর সমাধির উন্নয়নে যা কিছু করার দরকার সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ তার সবকিছুই করবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।