দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নিয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বিদায়ি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হলেন। গতকাল সকালে বঙ্গভবনের দরবার হলে তাকে শপথ পড়ান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। নতুন রাষ্ট্রপতির প্রতি রইল আমাদের অভিনন্দন। ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণকারী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবন এককথায় বৈচিত্র্যময় ও বর্ণাঢ্য। তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ আহŸানে ১৯৬৬ সালে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন তিনি। সে সময় সামরিক শাসকের রোষানলে পড়ে নির্যাতনের শিকার ও কারারুদ্ধ হন। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৮২ সালে শুরু হয় বিচারক হিসাবে তার কর্মময় জীবন। ১৯৯৫ ও ’৯৬ সালে পরপর দুবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৬ সালে জেলা দায়রা জজ হিসাবে অবসরগ্রহণ করেন। এরপর ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী হিসাবে কাজ করেন। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
মো. সাহাবুদ্দিন এমন এক সময়ে দেশের রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হলেন, যখন জাতি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে। পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাস-বিদ্বেষ দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়াকে অস্বস্তিতে রেখেছে। সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে রয়েছে মতদ্বৈধতা। এমন একটি অবস্থায় জাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারেন, তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিরও দেখা নেই। এ অবস্থায় নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। তিনি যেহেতু রাষ্ট্রপতি হিসাবে একজন দলনিরপেক্ষ ব্যক্তি, সেহেতু তার সুযোগ রয়েছে জাতিকে এমন দিকনির্দেশনা দেওয়ার, যা দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে হয়ে উঠতে পারে গ্রহণযোগ্য। বড় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে বিশাল দূরত্ব বিরাজ করছে, তাও কমিয়ে আনতে ভ‚মিকা রাখতে পারেন তিনি। সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার তাগিদ রয়েছে দেশের সর্বস্তর থেকে। নতুন রাষ্ট্রপতি এ ঐক্যের পথ সুগম করতে পারেন বৈকি।
বাংলাদেশ পরিচালিত হয় সংসদীয় পদ্ধতির সরকার দ্বারা। এ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতা না থাকায় তার পক্ষে বেশি কিছু করার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই তাকে অ্যাক্ট করতে হয়। তারপরও কথা থাকে-একজন রাষ্ট্রপতির যদি চারিত্রিক সংহতি থাকে, প্রজ্ঞা ও সততা থাকে এবং থাকে গ্রহণযোগ্যতা, তাহলে তিনি দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারেন অবশ্যই। একজন অভিভাবক হিসাবে জাতিকে স্বস্তি দিতে নতুন রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ ভ‚মিকা রাখবেন-এ প্রত্যাশায় তাকে আরেকবার অভিনন্দন।