ওষুধক্ষেত্রে অরাজকতা দূর করতে হবে

17

অতিরিক্ত দামে ইনজেকশন বিক্রির একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক। ২০ টাকার ইনজেকশন হাজার টাকায় বিক্রির কারণে সংশ্লিষ্ট ফার্মেসিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
প্রকাশিত খবরটি ছোট হলেও এর গুরুত্ব খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। দেশের ওষুধের বাজারে এক ধরনের নৈরাজ্য বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়। এলাকাভেদে, বিশেষ করে হাসপাতালের সামনে যেসব ওষুধের দোকান আছে, সেগুলোতে বিশেষ প্রয়োজনের সময় ওষুধের বাড়তি দাম রাখা হয়। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায় নকল ওষুধের কারখানা। এসব কারখানায় নামিদামি কম্পানির জনপ্রিয় ওষুধ নকল করে বাজারজাত করা হয়। নকল প্যারাসিটামল সিরাপসহ অন্যান্য ওষুধ সেবনে শিশুমৃত্যুর ঘটনা অতীতে ঘটেছে। মানুষ হিসেবে কতটা নিচে নামলে মানুষের জীবন নিয়ে এভাবে ব্যবসা করা যায়!
বাংলাদেশে নকল ও ভেজাল ওষুধ কী পরিমাণে তৈরি হয় তার কোনো নির্দিষ্ট তথ্য সম্ভবত নেই। নানা ধরনের সিরাপ, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল নকল হচ্ছে। এমন অনেক কারখানা পাওয়া গেছে, যেখানে অখ্যাত কম্পানির ওষুধ নামি ওষুধ কম্পানির লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। ভেজাল ওষুধের কাঁচামালও পাওয়া গেছে এসব কারখানায়। অনেক ট্যাবলেট, ক্যাপসুল পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেগুলোর ভেতরে সাধারণ আটা-ময়দা ছাড়া কিছুই নেই। সিরাপের মধ্যে আছে শুধু রং। কেন এমন হচ্ছে?
নীতি-নৈতিকতা সমাজ থেকে অনেক আগেই নির্বাসিত হয়েছে। তার স্থান দখল করেছে অপরাধপ্রবণতা। কিন্তু সেই অপরাধপ্রবণতা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, কতটা নির্মম ও নিষ্ঠুর হতে পারেÑতারও যেন কোনো সীমা-পরিসীমা থাকছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? সাংবিধানিকভাবে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নোয়াখালীতে একটি ফার্মেসিকে জরিমানা করেছে। কিন্তু সারা দেশে যে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে না, সেই নিশ্চয়তা দেবে কে? সরল বিশ্বাসে ওষুধ কিনে ক্রেতা প্রতারিত হবে নাÑএমন নিশ্চয়তাও তো দরকার।
ওষুধ ব্যবসা অন্য দশটা ব্যবসার মতো নয়। ভেজাল ওষুধ উৎপাদক ও বাজারজাতকারীসহ অতিরিক্তি দামে ওষুধ বিক্রি বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হলে ওষুধক্ষেত্রের সব অরাজকতা দূর হবে।