সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ মইয়ারচরে পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার নারী

18

স্টাফ রিপোর্টার :
মইয়ারচরে পারিবারিক সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে মিথ্যা মামলা ও হামলার শিকার হয়েছেন এক নারী ও তার পরিবারের সদস্যরা। তাদেরকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, জাল দলিল তৈরি করে সম্পত্তি দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ওই ভূমিখেকো চক্র।
সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন জালালাবাদ থানার সোনাতলা মইয়ারচর গ্রামের আলা উদ্দিনের স্ত্রী পিয়ারুন নেছা। একইসঙ্গে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে পিয়ারুন নেছা বলেন, ‘আমার বাবা তৈয়ব আলীর রেখে যাওয়া সাদিরপুর দিঘর মৌজার ১৮১ দাগের ৩২ শতক এবং একই মৌজার ৫৩১ দাগের ৬৯ শতক জমি রয়েছে। কিছুদিন আগে জালালাবাদ থানার সোনাতলা এলাকার সাদিপুর গ্রামের মৃত নুনু মিয়ার ছেলে আব্দুল আলী, তার স্ত্রী আজিরুন নেছা, মৃত ফরিদ মিয়ার ছেলে আছাব মিয়া, আব্দুল হান্নান গং এই জমির দখল নিতে নামে-বেনামে বিভিন্ন দলিল তৈরি করে মাঠপর্সা নিয়ে নেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন জমিটি জোরপূর্বক দখল নিতে চেষ্টা চালিয়ে আসছে সন্ত্রাসীরা। শুধু তাই নয় ভূমিখোকো চক্র আব্দুল আলী তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ওই জায়গার দখল নিতে বাউন্ডারি প্রাচীর নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে। এতে বাঁধা দিতে গেলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে।’
পিয়ারুন নেছা জানান, বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও তারা আমাদেরকে পাত্তা না দিয়ে ভূমিখেকো চক্রকে সহযোগিতা করছে। এমনকি মিথ্যা ও চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। বিষয়টি সমাধানে স্থানীয়ভাবে কয়েকবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তাতে কোনো সমাধানে আসেনি।
সংবাদ সম্মেলনে পিয়ারুন নেছা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের মানসিকভাবে সহযোগিতা করায় আমাদের আত্মীয় জাবেদ মিয়াকেও তারা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আব্দুল আলীর লোক জকিগঞ্জ থানার সরিষা মানিকপুর সরিষা গ্রামের মৃত ময়নুল হকের ছেলে বর্তমানে সিলেট শহরের কাজলশাহ বাগবাড়ীর বাসিন্দা মো. মুফিকুল হক গত ৫ জানুয়ারি বাদি হয়ে জালালাবাদ থানায় মামলা করেন। চাদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ দিযে এ মামলায় জাবেদ মিয়াকে হয়রানির চেষ্টা করা হয়। পরে এই মিথ্যা মামলা থেকে আদালত আমাদের ৪ জনের জামিন মঞ্জুর করে।’
মামলায় মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘মামলায় যে ঘটনার স্থান ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে সে সময় জাবেদ মিয়া তার চাকরির ডিউটিতে ছিলেন। ডিউটিরত স্থানে সিসি ক্যামেরায় প্রমাণ রয়েছে।’
পিয়ারুন নেছা আরও বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত গরিব ও অসহায়। আমরা দিন আনি দিনে খাই। আমাদের পৈত্রিক ভূমি রক্ষার জন্য আমরা এখন ধারে ধারে ঘুরছি। এই ভূমিখেকো চক্র আব্দুল আলী আমাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানিমূলক কর্মকা- চালিয়ে আমাদেরকে সর্বশান্ত করছে।’
পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকবার থানায় মামলা দিতে গেলেও পুলিশ টালবাহানা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে আব্দুল আলী বাহিনী দিয়ে আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘গত ৩ জানুয়ারি পুলিশ আমার পরিবারের সদস্যদেরকে থানায় ডেকে নেয়। তখন পুলিশ ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদাকাগজে আমি বাদী পিয়ারুন নেছার স্বাক্ষর নিয়ে আমার অভিযোগটি তুলে নেয়। এরপর পুলিশ বিবাদীদের পক্ষ নিয়ে আমাদের উপর মিথ্যা ও হয়রানিমুলক চাঁদাবাজির মামলা রেকর্ড করে।’
নিয়মিত হুমকি-ধমকির মধ্যে আতংকে দিন কাটছে জানিয়ে পিয়ারুন নেছা বলেন, ‘গভীর রাতে আমাদের বাড়ির পিছনের দরজা ভেঙে সাদিপুরের সাহিদ উল্ল্যাহ্র ছেলে ছৈইল মিয়া, একই এলাকার রশিদ আলীর ছেলে আফতাব মিয়া, বাতির আলীর পুত্র সিরাজ মিয়াসহ একদল পুলিশ ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে আমাদের ভয়ভীতি ও মারধর করে এবং জায়গার আশপাশে দেখলে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়।’
তিনি আরও জানান, গত ১ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রে-শস্ত্রে সঞ্জিত হয়ে বিরোধপূর্ণ ভূমিতে অবৈধ সাইনবোর্ড স্থাপন করে। এতে ভূমিখেকো চক্রদের বাঁধা দিলে মামলা মোকদ্দমা, লাশ গুম ও মিথ্যা মামলাসহ প্রাণনাশের প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে অস্ত্রের মুখে আমাদের তাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে ভূমিখেকো চক্র জমি দখলের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন সব মহলের সহযোগিতা ও সুদৃষ্টি কামনা করেন অসহায় এই নারী।