কাজিরবাজার ডেস্ক :
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে নারী সদস্য সংখ্যা একজন বেড়েছে। বিগত কমিটির বিভিন্ন পদে নারী সদস্য ১৯ জন ছিল, সেখান থেকে বেড়ে এখন ২০ জন হয়েছে। ফলে নারী নেতৃত্বের হার হয়েছে ২৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আগের কমিটিতে এই হার ছিলো ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। পদ শূন্য থাকা তিনটি পদে কোনও নারী সদস্য যুক্ত হলে এই হার আরও বাড়বে। অপরদিনে পুরুষদের দিয়ে শূন্য পদ পূরণ করা হলে নারী নেতৃত্বের হার কিছুটা কমে যাবে।
রবিবার (১ জানুয়ারি) ঘোষিত আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। রবিবার আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ৭৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। সভাপতিম-লি, সম্পাদকম-লি ও কেন্দ্রীয় সদস্যের একটি করে পদ এখনও শূন্য রয়েছে। এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন শেষে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে চার দশক ধরে আছেন শেখ হাসিনা, এবার দশম বারের মতো তিনি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ৭৮ সদস্য বিশিষ্ট নবনির্বাচিত কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সভাপতিম-লির ১৭টি পদের মধ্যে ১৬ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন নারী ও ১৩ জন পুরুষ। বিদায়ী কমিটিতে সভাপতিম-লির ১৭ সদস্যের মধ্যে তিনজন নারী ছিলেন। তাদের মধ্যে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন মারা গেলে পুরুষ সদস্য নির্বাচন করে সেই পদ পূরণ করা হয়েছিল। পরে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মারা গেলে সিমিন হোসেন রিমিকে নির্বাচন করা হয়। নতুন কমিটিতে রিমিসহ ছাড়া বাকি দুই নারী হচ্ছেন- আগের কমিটির বেগম মতিয়া চৌধুরী ও নতুন করে নির্বাচিত হওয়া সৈয়দা জেবুন্নেছা হক। সৈয়দা জেবুন্নেছা ২০১২ সালের কমিটিতে কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন।
এছাড়া সম্পাদক ম-লির মধ্যে যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি, অর্থ ও পরিকল্পনা বিয়ষক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুর নাহার এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা একইপদে আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। অবশ্য আগের সম্মেলনে মেহের আফরোজ চুমকি মহিলা বিষয়ক সম্পদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারের সম্মেলনের কয়েকদিন আগে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং তার শূন্য পদে জাহানারা বেগমকে নির্বাচিত করা হয়। নতুন সম্মেলনেও তিনি এ পদটি আবারও পেয়েছেন। দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের পদটি এখনও শূন্য রয়েছে।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্যের ২৮টি পদের মধ্যে ২৭ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিতে আগের কমিটির নারী সদস্য বেগম আখতার জাহান, মেরিনা জাহান, পারভীন জামান কল্পনা, সফুরা বেগম রুমি, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, মারুফা আক্তার পপি ও গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা সবাই নতুন কমিটিতে মনোনয়ন পেয়েছেন। এর বাইরে বিশিষ্ট নাট্যাভিনেত্রী তারানা হালিম নতুন করে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনয়ন পেয়েছেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার বাধ্যবাধতা ছিল। তবে ওই সময়ের মধ্যে প্রায় কোনও দলই ইসির এ শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সংশোধিত গঠনতন্ত্রেও এ বিধানটি যুক্ত করে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল। তবে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত দলটির সম্মেলনে গঠনতন্ত্র ফের সংশোধন করে নারী নেতৃত্বের শর্ত পূরণের সময় বাড়ানো হয়। এছাড়া দলটি ইসির কাছে চিঠি দিয়েও শর্ত পূরণের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্য নির্বাচন কমিশনও এই শর্ত পূরণের সময় ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। তবে আরপিও এখনও সংশোধন হয়নি।