করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতি যখন একটু ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দেয়। এর ঢেউ এসে লাগে বাংলাদেশেও। গত একটি বছর অস্বাভাবিক পণ্যমূল্য ভুগিয়েছে ভোক্তাদের। মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে সরকারকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় ২০২৩ সালে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে, কমবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মন্দার আশঙ্কায় বিশ্ব অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, খরা, অতিবৃষ্টি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জ্বালানির উচ্চমূল্যে ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে ব্যাহত হয়েছে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ। ২০২৩ সালেও এসব কারণে খাদ্য ও শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে। বিশ্বব্যাংকের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সাল ছিল একটি অনিশ্চয়তার বছর। এ বছর অনিশ্চয়তা আরো বাড়বে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও। আমদানিনির্ভর দেশ হিসেবে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা। সাধারণ মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে। বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার চাল, ভোজ্য তেলসহ বিভিন্ন ভোগ্য পণ্য আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দিলেও বাজারদর দেশের মানুষকে ভুগিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার?
এক বছরে খোলা আটা ৩৪ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫ টাকা হয়েছে। প্যাকেট আটার দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। গত এক বছরে কয়েক দফায় বেড়েছে ভোজ্য তেলের দাম। গত বছর দেশের মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে চালের দাম। সরকার ব্যবসায়ীদের শুল্ক সুবিধায় চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ার পরও কমেনি চালের দাম। গত এক বছরে বাজারে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪৪.৪৪ শতাংশ। উৎপাদন ও চাহিদার দিক থেকে দেখলে বাংলাদেশে এখন ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত। এর পরও চালের দাম কমছে না কেন? বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালায় এক তথ্যে জানানো হয়েছে, মিল মালিকদের অতিমুনাফায় চালের দাম কমছে না।
যেকোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে নতুন করে সংকটে ফেলবে। বাংলাদেশের বাজারে একটা অদৃশ্য সিন্ডিকেট সব সময় সক্রিয়, এমন কথা সব সময় শোনা যায়। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকটও সৃষ্টি করেন।
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেÑএটাই আমাদের প্রত্যাশা।