মৌলভীবাজারে দুই ছাত্রলীগ কর্মী খুনের ঘটনায় গ্রেফতার আরো ২

31

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারে ছাত্রলীগের দুই কর্মী খুনের ঘটনায় অবশেষে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা করেছেন নিহত ছাত্রলীগ কর্মী সাবাবের মা সেলিনা বেগম চৌধুরী। এ ঘটনায় আরো দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে রুবেল নামে আরেক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। গত শনিবার রাত সোয়া ৮টায় আটকৃত দুজনসহ মোট ১২ জনের নাম উল্যেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সেলিনা। রবিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল আহম্মদ।
আটকৃতরা হলো-কুলাউড়া উপজেলার পাবই গ্রামের কৌশিক দাস-এর পত্র কনক দাশ ও সদর উপজেলার ফতেপুর এলাকার আনছার মিয়ার পুত্র আল জামিল।
এর আগে গত শনিবার রাতে জড়িত থাকা সন্দেহে প্রাথমিক তদন্তে ৫ জনকে শনাক্ত করেছিল পুলিশ। মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ছবি প্রকাশ করে ওদের ধরিয়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেবার ঘোষণা করা হয় এবং বলা হয় যারা খুনিদের আশ্রয় দিবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে বা যারা ওদের ধরিয়ে দিতে সহায়তা করবে তাদের নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও অভয় দেয় মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ। সন্দেহভাজনরা খুনিরা হল সনি, মাহদী, তুষার, সৌমিক ও প্রতীক নামের পাঁচ যুবক। গত শনিবার রাতের মামলার এজহারে ওই সন্দেহভাজন পাঁচ খুনীর নাম রয়েছে বলেও জানান মডেল থানার ওসি।
এদিকে গত শনিবার সিলেটের ডিআইজি নিহত দু’জনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। এসময় হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন। এদিকে নিহত স্কুলছাত্র মাহীর ডায়েরি সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ডায়েরির প্রথমেই লিখা ছিল বড়ভাই সম্বোধন করে নিহত সাবাবের ফোন নম্বর।
মৌলভীবাজার শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের সম্মুখে মাঠের পশ্চিম পাশে ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ আলী সাবাব (২১) এবং নাহিদ আলম মাহী (১৬)কে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
সাবাব মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র। আর মাহী সরকারি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। নিহত এই দু’জন ছাত্রলীগের কোনো দায়িত্বশীল পদে ছিল না। তবে সাবাব সক্রিয় কর্মী ছিল। আর সাবাবের অনুসারী বা শিষ্য ছিল মাহী। সাবাবকে সে বড়ভাই বলে সম্বোধন করতো। তার নিজ ডায়েরিতেই এমন ইঙ্গিত ছিল।
এদিকে নিহত মাহীর মামা মো. আলী ইমরান জানিয়েছেন সিলেটের ডিআইজি তাদের আশ্বস্ত করেছেন হত্যাকারীদের গ্রেফতারের। এই সময় মাহীর হাতে লিখা একটি ডায়েরি পুলিশ নিয়ে আসে। ইমরান জানান এই ডায়েরির প্রথমেই বড়ভাই সম্বোধন করে লেখা পাওয়া গেছে নিহত মোহাম্মদ আলী সাবাব এর ফোন নম্বর।
এখন নিহত মাহীর মা জুলেখা বেগম পুত্র শোকে শয্যাশায়ী। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি সুস্থ হলেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান রবিবার মুঠোফোনে বলেন, মৌলভীবাজার শান্তির শহর। আমাদের সকলের কাম্য এই শহরেক সুন্দর রাখা। যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তারা যেন রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় পশ্রয় না পায়। কারো কথায় প্রভাবিত না হয়ে যেন শক্তভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের কমিশনার (স্বাগত) এর উপর হামলা করা হয়। এটার ও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এদিকে দুই ছাত্র হত্যার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন মৌলভীবাজার পৌরসভা মেয়র ও জেলা আ’লীগের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুর রহমান। রবিবার দুপুরে এ প্রতিবদেককে বলেন, দুই শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় আমি তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছি। নৃশংস এই ঘটনায় আমি হতবাক ও বাকরুদ্ধ। হত্যাকারী যে কেউ হোক আমি অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
সম্প্রতি মৌলভীবাজার পৌরসভা কাউন্সিলর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক স্বাগত কিশোর দাশের উপর হামলা হয়। ওই হামলায় স্বাগত গুরতর আহত হন। এক সূত্র জানিয়েছে স্বাগত-এর উপর হামলার ঘটনার মামলার আসামী ছিল নিহত মোহাম্মদ আলী সাবাব।