দেশে চালের বড় জোগান আসে বোরো ধান থেকে। তাই বোরো উত্তোলনের মৌসুমে চালের দাম কিছুটা কমে। এবার বোরোর মৌসুমেও চালের দাম কমেনি। আউশের উৎপাদনও চালের দাম কমার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
একটু একটু করে চালের দাম বাড়ছেই। বেশি বেড়েছে চিকন চালের দাম। জানা যায়, বাজারে মোটা চালের দামও দ্রুত বাড়ছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি মোটা চাল বি-২৮-এর দাম ছিল ৫৭-৫৮ টাকা, বৃহস্পতিবার সেই চাল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি দরে। চিকন চালও কেজিতে দুই-তিন টাকা করে বেড়েছে।
বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ বছর বন্যায় যেমন কিছুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তেমনি প্রচুর আমদানিও হয়েছে। এর পরও সরকার এ বছর শুল্ক কমিয়ে ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে। সরকার নানাভাবে নিজস্ব মজুদ থেকেও বাজারে চাল ছাড়ছে। কিন্তু চালের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সেসবের কোনো প্রভাবই লক্ষ করা যাচ্ছে না। ধারণা করা হয়, বেসরকারি পর্যায়ে চাল মজুদ রাখার সক্ষমতাও অনেক বেড়েছে। ফলে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মজুদের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণেই এ বছর দাম ক্রমাগত বাড়ছে। আর তার প্রধান শিকার হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
দেশে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা সব সময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। সুযোগ পেলেই তাঁরা মজুদ করেন এবং পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেন। নিকট অতীতে পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, আদা, চিনিসহ অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই দেখেছি, হঠাৎ করে বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। বর্তমানে তাঁরা অজুহাত হিসেবে দেখাচ্ছেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তেলের দাম ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে। কিন্তু ছয় মাস আগে যখন এর কোনোটাই ছিল না, তখনো আমরা দেখেছি হঠাৎ করে কোনো কোনো পণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠতে। দেখা গেছে, পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে যেখানে এক ডজন ডিমের দাম দুই টাকার বেশি বাড়ার কথা নয়, সেখানে এক ডজন ডিমে দাম হঠাৎ করেই ৩০-৪০ টাকা বেড়ে যায়। কাজেই বাজার বিশ্লেষকরা এগুলোকে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর নিছক কারসাজি হিসেবেই দেখে থাকেন।
ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ করা সরকারের কর্তব্য। কিভাবে বাজারে হস্তক্ষেপ করা হবে, কিভাবে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে এবং কিভাবে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি মোকাবেলা করা হবে, সরকারকেই সেই উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আমরা চাই, বাজারে পণ্যমূল্য ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাক।