কবি শামসুর রাহমানের প্রয়াণবার্ষিকী আজ

24

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আধুনিক বাংলা কবিতার বরপুত্র কবি শামসুর রাহমান। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা-উত্তর প্রতিটি আন্দোলনের অব্যক্ত আবেগ-অনুভূতিকে ধারণ করে গোটা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তিনি। কবিতায় তার মৃত্যু-পরবর্তী অনুরণন তুলে ধরেছিলেন, লিখেছেন, ‘তখন আমার কবরের ঘাসে, কাঁটাগুল্ম, আগাছায়/কখনো নিঝুম রোদ, কখনো হৈ-হৈ বৃষ্টি, কখনো/জ্যোৎস্নার ঝলক, কখনো অমাবস্যা/কখনো বা হাওয়ার ফোঁপানি’- ‘আমার মৃত্যুর পরে’…। এই গুণী ব্যক্তিত্বের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার।
২০০৬ সালের আজকের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। রাজধানীর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয় তাকে।
১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মাহুতটুলীতে শামসুর রাহমান জন্মগ্রহণ করেন। এই রাজধানীতেই তার বেড়ে ওঠা। তাই নাগরিক দুঃখ-সুখ তার কবিতায় বিশেষভাবে উঠে এসেছে। জীবনের সত্য-সুন্দরকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনন্য। পাশাপাশি বাঙালীর সব আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবদীপ্ত অধ্যায় ফিরে ফিরে এসেছে তার কবিতায়।
১৯৬০ সালে শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশ হয়। এর পরপরই তিনি সচেতন পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার পরবর্তী গ্রন্থগুলো পাঠকদের ক্রমেই তার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। তার চতুর্থ গ্রন্থ ‘নিরালোকে দিব্যরথ’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার নিজস্ব স্বর ও শিল্পবোধের স্বাতন্ত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তার লেখা ষাটের অধিক কবিতার বই প্রকাশিত। গদ্য কবিতার দুর্বোধ্যতার মধ্যেও পাঠকের সঙ্গে নিবিড় এক সখ্য গড়ে তুলেছেন এই কবি। পৌঁছেছেন পাঠকের হৃদয়ে। শিশুতোষ, অনুবাদ, ছোটগল্প, উপন্যাস, আত্মস্মৃতি, প্রবন্ধ-নিবন্ধের একাধিক গ্রন্থও লিখেছেন তিনি।
শামসুর রাহমান সাংবাদিক হিসেবে ১৯৫৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক মর্নিং নিউজে। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এরপর তিনি অধুনা নামের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শিল্প-সাহিত্যে অবদানস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা পদকসহ (১৯৯১) দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন। রবীন্দ্র ভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রী দেয়া হয়। বাংলাদেশের মানুষের জন্য তিনি আমৃত্যু লিখেছেন। মৃত্যুর পর কবির ইচ্ছানুযায়ী ঢাকার বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।