কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে রোজা ও ঈদের ছুটিসহ তা ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে ঈদের পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এই সময়ের মধ্যে কোনো রকম চাপ প্রয়োগ না করে টিউশন ফিও নিতে পারবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘৩০ মের পর যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ার কথা কেউ প্রচার করে, তাহলে তা পুরোটাই গুজব। কারণ এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে হয়নি। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর কাছাকাছি সময়ে গিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।’
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তিনি বলেছেন, ‘যখন করোনার প্রকোপ থাকবে না, তখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। আমরা এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলব না। অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজ সবই বন্ধ থাকবে, যদি করোনাভাইরাস অব্যাহত থাকে। যখন এটা থাকবে না, তখনই খুলব।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রেও জানা গেছে, দেশের সব ধরনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরই শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। কারণ শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে পাঠিয়ে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেওয়া হবে না। এমনকি বর্তমানে স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অন্তত ১৫ দিন পর শুরু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, ‘সাধারণ ছুটির সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে রোজা ও ঈদের ছুটিও চলছে। এরপর গ্রীষ্মকালীন ছুটিসহ আগামী ৬ জুন পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। এর আগেই পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই স্কুল খোলার সম্ভাবনা নেই।’
জানা যায়, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল থেকে মার্কেট, দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। তবে বেশির ভাগ মার্কেটই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দোকান মালিক সমিতি ও মার্কেট কর্তৃপক্ষ। তার পরও অলিগলি অনেকটাই জমজমাট। আর কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও অলিগলিতে অবস্থিত। ফলে এই সুযোগে টিউশন ফি আদায়সহ নানা কাজে কিছু কিন্ডারগার্টেনের অফিস রুম খোলা রাখা হয়েছে। এমনকি গতকাল মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় কিছু বাচ্চাকে স্কুল ড্রেস ও ব্যাগ হাতেও দেখা যায়।
তবে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব মো. সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৭ মার্চ থেকে আমাদের সব স্কুল বন্ধ রয়েছে। কোনোভাবেই স্কুল খোলার প্রশ্নই ওঠে না। এমনকি আমরা গত মার্চ ও এপ্রিল মাসের টিউশন ফি এখনো নিতে পারিনি। ফলে শিক্ষকদের বেতনও দেওয়া সম্ভব হয়নি।’
জানা যায়, করোনাকালীন প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তেমন কোনো সমস্যায় না পড়লেও নিজস্ব আয়ে চলা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চরম অর্থ সংকটে পড়েছে। যাদের গচ্ছিত টাকা আছে সেসব প্রতিষ্ঠান তাদের ফান্ড থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করলেও, যাদের ফান্ডে টাকা নেই তারা মহাদুশ্চিন্তায় আছে।
সম্প্রতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে এক আদেশে টিউশন ফি আদায়ে চাপ প্রয়োগ না করার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে বকেয়াসহ মাসিক বেতন আদায়ের অনুরোধ জানানো হয় আদেশে।
টিউশন ফি আদায় নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। কারণ তারা বেতন চাইলে সেটা অমানবিকতার পর্যায়ে পড়ে। আর বেশির ভাগ অভিভাবকও এই মুহূর্তে বেতন দিতে রাজি নন। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বেতন আদায় না করলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনও দিতে পারছে না। আর এই মুহূর্তে শিক্ষকদের বেতন-বোনাস বাকি পড়লে সেটাও অমানবিকতার পর্যায়ে পড়ে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই মানবিক আবেদনের মাধ্যমে এসএমএস পাঠিয়ে বেতন চাচ্ছে। আবার কেউ কেউ কী করবে ভেবে পাচ্ছে না? তবে নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধে শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ বাড়ছে।
গত শনিবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোটাই টিউশন ফি-নির্ভর। আমি অভিভাবকদের অনুরোধ করব, এখন তাঁদের খরচও একটু কম। তাই তাঁরা যেন টিউশন ফির ব্যাপারটা বিবেচনা করেন। তবে যাঁরা সমস্যায় রয়েছেন তাঁদের কথা ভিন্ন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকেও বলব, প্রয়োজনে কিছুটা ফি কম নেওয়া বা কিস্তিতে ফি নেওয়ার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। যার মধ্য দিয়ে অভিভাবকরাও কিছুটা স্বস্তি পেলেন, স্কুল শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারল, বড় আকারের কোনো সমস্যায় পড়ল না। কিন্তু এখন সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বলার সুযোগ নেই যে তোমরা ফি নিবে না।’