কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এডিবির চোখে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। করোনার সংকট কাটিয়েও বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছে এডিবি। অথচ চলতি অর্থবছরে মালয়েশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুরের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি অর্জনে এ দুটি দেশকেও পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ।
বুধবার (৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় এডিবির সদরদপ্তর ম্যানিলা থেকে সংস্থার সব সদস্য দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়। সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং ভার্চুয়ালি এ তথ্য তুলে ধরেন।
এডিবির প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষে থাকবে ভারত। দেশটির সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে থাকলেও গত অর্থবছরের চেয়ে এবার ভারতের প্রবৃদ্ধি কমবে। দক্ষিণ এশিয়ায় গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। একই সময়ে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির হার হবে মাত্র ৪ শতাংশ।
এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরে পশ্চিম এশিয়ায় গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৭, যা গত অর্থবছরে ছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষে থাকবে চীন। দেশটির প্রবৃদ্ধির হার হতে পারে ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে চীনের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১ শতাংশ। চীনের প্রবৃদ্ধিতে ধস নামার শঙ্কা রয়েছে। চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবৃদ্ধির হার হবে ৩ শতাংশ।
দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় শীর্ষে ভিয়েতনাম
চলতি অর্থবছরে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অর্থনীতি। গত অর্থবছরে এ অঞ্চলের গড় প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯ শতাংশ হলেও এবার তা ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হবে পলে আভাস দিয়েছে এডিবি। চলতি অর্থবছরে এ অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষে থাকবে ভিয়েতনাম। দেশটি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে করবে। এছাড়া মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন ৬ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া ৫, সিঙ্গাপুর ৪ দশমিক ৩, থাইল্যান্ড ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।
ঘুরে দাঁড়াবে প্যাসিফিক অঞ্চল
করোনা সংকটে ঘুরে দাঁড়াবে প্যাসিফিক অঞ্চল। এ অঞ্চল চলতি অর্থবছরে গড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত বছর ছিল মাইনাস শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে ফিজি, দেশটি চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। গত অর্থবছরে ছিল মাইনাস ৪ দশমিক ১ শতাংশ। পাপুয়া নিউ গিনি চলতি অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে, যা গত বছর ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ মাত্র।
প্রবৃদ্ধি অর্জনে মধ্য এশিয়ায় সুখবর নেই
মধ্য এশিয়া এবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে আভাস দিয়েছে এডিবি। এ অঞ্চলে চলতি অর্থবছরে গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। অথচ করোনা সংকটেও গত বছর প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। মূলত ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে এই অঞ্চলের অর্থনীতি আরও মুখ থুবড়ে পড়বে। মধ্য এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে উজবেকিস্তান ৪ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে আজারবাইজান ৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে, যা গত বছর ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছর শেষে কাজাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৪ শতাংশ।
এডিবির প্রতিবেদনে অনুমান করা প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি যে চাপের মধ্যে পড়বে এবং আন্তর্জাতিক তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও উচ্চ আমদানি ব্যয় দেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে, তার ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার নির্ভর করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাব কমে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী ভোগ ও ব্যয় বেড়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় অংকের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের পরও ডলারের বিপরীতে টাকাকে দুর্বল করতে পারে।
প্রতিবেদনে এডিবি বলেছে, আগের বছরের তুলনায় গত অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতির হার কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছর তা বেড়ে ৬ শতাংশ হতে পারে। বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে চলতি হিসাবে ঘাটতি জিডিপির ২ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে, যা গত অর্থবছরে ছিল শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।