কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইউক্রেনে রকেট হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে লে-অফ ঘোষিত বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধির ২৮ নাবিক অবশেষে আজ দেশে ফিরছেন। রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্ট থেকে তাদের তুরস্কের ইস্তাম্বুল হয়ে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ দুপুরের মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারা পৌঁছে যাবেন।
বিএসসি সূত্র জানিয়েছে, মরদেহ আনা নিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে ২৮ নাবিকের সঙ্গে নিহত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের লাশ এই ২৮ জনের সঙ্গে আনা যাচ্ছে না। এ লাশ ইউক্রেনের একটি হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষণ করা আছে। লাশ আনার বিষয়ে সপ্তাহখানেক সময় গড়িয়ে যেতে পারে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় বিধ্বস্ত হয় বাংলার সমৃদ্ধি। হামলায় ব্রিজে অবস্থানরত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর নিহত হন। অবশিষ্ট ২৮ নাবিক প্রাণে রক্ষা পান। পরে তাদের রোমানিয়া ও পোল্যা-ের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় মলদোভা হয়ে রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টের একটি হোটেলে। সেখানে তাদেরকে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রাখা হয়। চেষ্টা চালানো হয় সঙ্গে হাদিসুরের লাশও পাঠানোর। কিন্তু রবিবার থেকে চেষ্টা শুরু হওয়ার পর এ বিষয়ে এখনও সফলতা আসেনি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেতে সপ্তাহখানেক সময়ও লেগে যেতে পারে। কেননা, ইউক্রেনে চলছে রাশিয়ার যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণে সরকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্মে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশের নাগরিকের লাশ আনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। এ নিয়ম-কানুন অনুসরণ ছাড়া লাশ আনতে গেলে মাঝপথে ‘কার লাশ কে নিয়ে যাচ্ছে’ এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভূত হতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে জটিলতার। সে কারণে নাবিকদের উদ্ধার করার কাজে জড়িত ইউক্রেনে বসবাসরত এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ। ওই ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বাংলার সমৃদ্ধি থেকে ২৮ নাবিককে উদ্ধার করে মলদোভা সীমান্তে নিয়ে রোমানিয়ায় বাংলাদেশী দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাতেই তাদের রোমানিয়া থেকে তুরস্কের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার কথা রয়েছে। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ট্রানজিট হয়ে তার্কিশ এয়ারলাইন্সযোগে তারা দেশে ফিরছেন বলে বিএসসি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ২৮ নাবিকের দেশে ফিরে আসার খবরে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা খুবই উদ্বেলিত। তাদের উদ্ধারে দ্রুত হস্তক্ষেপ ও তৎপরতায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নাবিক ও তাদের স্বজনরা।
রকেট হামলায় বিধ্বস্ত বাংলার সমৃদ্ধিকে লে-অফ করার পর এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে অলভিয়া বন্দরে। অলভিয়ার পোর্ট কন্ট্রোল ও সেখানকার শিপিং এজেন্টস জাহাজটি দেখভাল করার দায়িত্ব থাকলেও যুদ্ধের কারণে তারা তা পালন করতে পারছেন কিনা- তা নিশ্চিত করা যায়নি। প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলার সমৃদ্ধি অলভিয়া বন্দরে নোঙ্গর করে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রকেট হামলায় এটি বিধ্বস্ত হয়। এ জাহাজটি ২০১৮ সালে বিএসসির নৌবহরে যুক্ত হয়। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কেন এ জাহাজকে অলভিয়া বন্দরে পাঠানো হলো- সে বিষয়ে বিএসসি ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। বিএসসি বলেছে, এটা ভাড়ায় দেয়া জাহাজ। যে সংস্থাটি ভাড়ায় নিয়েছে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বাধ্য ছিলেন জাহাজ প্রেরণে। কিন্তু বিএমএমওএ বলেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ পরিস্থিতি, জলদস্যুকবলিত কোন বন্দরে কোন মালিক চুক্তি করলেও জাহাজ প্রেরণে বাধ্য নয়। প্রায় দু শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এ জাহাজটি চীনে তৈরি করা হয়। জাহাজ কেনার বিপরীতে চীন সরকারের ঋণ রয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থে কেনা এ জাহাজটির ভবিষ্যত কি হবে তা পরিষ্কার নয়। প্রসঙ্গত, অলভিয়া বন্দরে বিদেশী আরও কিছু জাহাজ নোঙ্গর করা আছে। যারা পোর্ট ক্লিয়ারেন্সের অভাবে অলভিয়া বন্দর ত্যাগ করতে পারছে না।