কাজিরবাজার ডেস্ক :
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে নামের তালিকা দিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিচ্ছে সার্চ কমিটি। শুক্রবারের মধ্যে প্রতিটি দলকে সম্ভাব্য নির্বাচন কমিশনারদের নামের তালিকা পাঠাতে হবে। মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত সার্চ কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি জানান, শনিবার বিশিষ্টজনদের সঙ্গে এবং রবিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করে মতবিনিময় করবে সার্চ কমিটি। ৫০- থেকে ৬০ জন বিশিষ্টজনকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সার্চ কমিটির পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ৩০ জনের নাম এসেছে। তিনি আরও জানান, বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য বিশিষ্টজনদের ই-মেইলের মাধ্যমে ও অন্যান্য মাধ্যমে আজ বুধবার আমন্ত্রণ জানানো হবে। বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর ১০ জন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠকে বসবে সার্চ কমিটি।
উল্লেখ্য, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দল চিঠি পেলে সার্চ কমিটিতে নাম পাঠানোর কথা জানায়। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। দ্বিতীয় বৈঠকের পরপরই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত ৬ সদস্যের সার্চ কমিটির রুদ্ধদ্বার দ্বিতীয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এ কমিটির সভাপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। বৈঠকে উপস্থিত সার্চ কমিটির অন্য ৫ সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারী কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। এ ছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সার্চ কমিটির কর্ম সম্পাদনে সাচিবিক সহায়তার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হয়ে বৈঠক চলে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত।
৬ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের জন্য নাম জমা দিতে বলা হয়। এ ছাড়া দেশের যে কোন ব্যক্তিও নাম পাঠাতে পারবে বলে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তবে রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিগতভাবে যারা নাম পাঠাবে, তাদের ই-মেইলে পাঠাতে বলা হয়। এ ছাড়া বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আগামী শনিবার (২টি) ও রবিবার একটিসহ মোট তিনটি বৈঠক করার জন্য প্রথম বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় সার্চ কমিটি। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মতামত ও নাম চেয়ে রবিবারই ই-মেইল করা হয়। এ ছাড়া ওই বৈঠকে সার্চ কমিটির সদস্যরা কীভাবে একটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন হতে পারে- সে বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। বৈঠকের সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসানও ৫ বছর আগের সার্চ কমিটিতে থাকার অভিজ্ঞতার আলোকে এ বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। অধিকতর যোগ্য ব্যক্তিদের নাম ঠিক করার বিষয়ে তিনি একটি গাইড লাইনও দেন।
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য নাম সুপারিশ করতে ৫ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ অনুসারে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আপীল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে গেজেট প্রকাশ করে। আইন অনুযায়ী এ কমিটিকে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করতে বলা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে সার্চ কমিটির কার্য সম্পাদনের প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করতে বলা হয়।
সার্চ কমিটিকে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ১০ জনের নাম সুপারিশ করতে বলা হলেও তার আগেই এ কমিটি সুপারিশ পেশ করতে পারবেন। আবার ইচ্ছে করলে তারা পুরোপুরি ১৫ কার্য দিবসই সময় নিতে পারবেন। আর রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির কাছ থেকে ১০ জনের নামের সুপারিশ পাওয়ার পর সেখান থেকে ১ জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ৪ জনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন।
সার্চ কমিটি আগে নাম দিলে রাষ্ট্রপতি দ্রুতই নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করতে পারবেন। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হলেও তার কিছুদিন পর নতুন কমিশন নিয়োগ দিলে তাতে আইনের কোন ব্যত্যয় হবে না। এ ছাড়া দেশে এর আগেও নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুদিন পর নতুন কমিশনের দায়িত্ব নেয়ার রেওয়াজ আছে। অবশ্য সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারির আগেই রাষ্ট্রপতির কাছে নামের তালিকা সুপারিশ করা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা এ সময়ের মধ্যে পারে কি না সেটা দেখার বিষয়।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব না নিতে পারলেও কোন সমস্যা নেই। যে দিন থেকে নতুন নির্বাচন কমিশন কাজের দায়িত্ব নেবে, সে দিন থেকে তাদের কার্যকাল শুররু হবে। আর নতুন ইসি দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত কমিশন সচিবের নেতৃত্বে স্থায়ী কর্মচারীরা রুটিন কাজ চালিয়ে যাবেন। তবে তারা কোন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবেন না।
এর আগে সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুসারে ২০১৭ সালে ৫ বছরের জন্য গঠন করা হয়েছিল বর্তমান নির্বাচন কমিশন। ওই নির্বাচন কমিশন ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। বর্তমান সার্চ কমিটির সভাপতি আপীল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিরও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ অনুসারে সার্চ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে আইনে বেঁধে দেয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও ইসি পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। প্রতি পদের জন্য ২ জনের নাম সুপারিশ করবে সার্চ কমিটি।
আইনানুসারে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটির মধ্যে কম পক্ষে ৩ জনের উপস্থিতিতে সভার কোরাম হয়। উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে। সার্চ কমিটি যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের নিকট হতে নাম আহ্বান করছে।