কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে পুরোদমে কাজ শুরু করেছে সার্চ কমিটি। তাই কে হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কারা হচ্ছেন অন্য কমিশনার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যেই এ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই এটি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাই এর আগেই সার্চ কমিটি নতুন ইসির জন্য ১০ জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে দেবেন। আর ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই রাষ্ট্রপতি ১ জনকে সিইসি ও ৪ জনকে কমিশনার নিয়োগ করবেন। এই নির্বাচন কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
এদিকে সার্চ কমিটির কাছেও ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের জন্য অনেক নাম এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এসব নামের তালিকা ধরে খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সার্চ কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে এ নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরও যেসব নাম আসবে এবং ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠককালে যেসব নাম আসবে সবগুলো তালিকাবদ্ধ করে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেবে সার্চ কমিটি। সার্চ কমিটি নিজেরাও অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন নাম খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক হওয়ার পর থেকেই কে হচ্ছেন সিইসি এবং কারা হচ্ছেন অন্য কমিশনার এ নিয়ে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য সিইসি ও ইসি হিসেবে আলোচনায় এসেছে বেশ কজনের নাম। নতুন নির্বাচন কমিশনের সিইসি হিসেবে সবচেয়ে বেশি গুঞ্জন রয়েছে সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার নাম নিয়ে। তিনি ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবেও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন বিসিএস (প্রশাসন) ৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা। তাই তাকে সিইসি নিয়োগ করলে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
নতুন সিইসি হিসেবে এ ছাড়াও যাদের নাম আলোচনায় এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের আরেক সাবেক সচিব মোহাম্মদ সফিউল আলম। তিনি ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিনয়ী, সৎ ও সজ্জন সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও আলোচনায় আছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম, কামাল আবদুল নাসের, নজিবুর রহমানের নাম। এ ছাড়া রয়েছে সাবেক সচিব শেখ ওয়াহেদুজ্জামান মুহিবুল হক, সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও জাফর আহমেদ খানের নামও। এ ছাড়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নামও আলোচনায় আছে।
আর নতুন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আলোচনায় আছে সাবেক সচিব কানিজ ফাতেমা, কামালউদ্দীন তালুকদার, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান ও সাবেক ক’জন জেলা জজ ও সাবেক একাধিক সেনা কর্মকর্তার নাম।
৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা নিচ্ছে সার্চ কমিটি। রাজনৈতিক দলগুলোকে ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে ১০ জন করে নামের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও আগ্রহী যে কোন ব্যক্তি সার্চ কমিটির কাছে নাম দিতে পারবেন। এ বিষয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সার্চ কমিটির কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম দেয়ার প্রস্তুতি নিলেও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বিএনপি সার্চ কমিটির কাছে কোন নাম জমা দেবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এই সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য নাম সুপারিশ করতে পারবে না।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ই-মেইলে নির্বাচন কমিশনের জন্য নামসহ মতামত নেয়া হলেও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করবে সার্চ কমিটি। ১২ ফেব্রুয়ারি ২টি ও ১৩ ফেব্রুয়ারি ১টিসহ তাদের সঙ্গে মোট ৩টি বৈঠক করবে সার্চ কমিটি। এর পর ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রাষ্ট্রপতির কাছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য বাছাইকৃতদের নাম সুপারিশ করবে। তার আগে আজ মঙ্গলবার সার্চ কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক হবে।
৫ ফেব্রুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ অনুসারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে এ কমিটির সভাপতি করা হয়। এ কমিটির অন্য ৫ সদস্য হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারী কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। সার্চ কমিটির সাচিবিক সহায়তার দায়িত্ব দেয়া হয় মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে।
আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করতে বলা হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম বৈঠক করার পর আজ মঙ্গলবার হচ্ছে দ্বিতীয় বৈঠক। এর পর আরেকটি বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনের জন্য ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করবে সার্চ কমিটি। আর রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির কাছ থেকে ১০ জনের নামের সুপারিশ পাওয়ার পর সেখান থেকে ১ জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ৪ জনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন। সার্চ কমিটি আগে নাম দিলে রাষ্ট্রপতি দ্রুতই নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করতে পারবেন। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হলেও তার কিছুদিন পর নতুন কমিশন নিয়োগ দিলে তাতে আইনের কোন ব্যত্যয় হবে না। এ ছাড়া দেশে এর আগেও নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুদিন পর নতুন কমিশনের দায়িত্ব নেয়ার রেওয়াজ আছে। অবশ্য সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারির আগেই রাষ্ট্রপতির কাছে নামের তালিকা সুপারিশ করা হবে।