কাজিরবাজার ডেস্ক :
সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও যশোর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেক আর নেই। মঙ্গলবার বেলা সোয়া এগারোটার দিকে রাজধানী ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। ব্যক্তিগত জীবনে ইসমাত আরা সাদেক এক ছেলে এবং এক মেয়ের মা। তার ছেলে তানভীর সাদেক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং মেয়ে নওরীন সাদেক একজন স্থপতি।
মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ইসমাত আরা সাদেককে শেষ বিদায় জানান তার সহকর্মীরা। সেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর প্রয়াত এই সাবেক প্রতিমন্ত্রীর মরদেহে প্রথম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর দলীয় প্রধান হিসেবে দলের নেতাদের নিয়ে মরদেহে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। এরপর জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতার পক্ষে প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
এদিকে জানাজার আগে সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। পরে মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অংশ নেন। জানাজায় মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেয়। জানাজার আগে পরিবারের পক্ষ থেকে সবার উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন ইসমাত আরার ছেলে তানভীর সাদেক। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পরে তানভীর সাদেক এবং তার বোন নওরীন সাদেকের সঙ্গে কথা বলেন ও সান্ত্বনা দেন।
প্রয়াত এই সংসদ সদস্য’র পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার সকালে মরহুমার মরদেহ ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে তার নিজ নির্বাচনী এলাকা যশোরের কেশবপুরে আনা হবে। সকাল ১১টায় কেশবপুর পাবলিক ময়দানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ জন্মস্থান বগুড়াতে নেয়া হবে। সেখানে তৃতীয় দফা জানাজা শেষে বগুড়ার সম্ভ্রান্ত সাতানী পরিবারের এই সদস্যকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত জানাজায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ভূমিমন্ত্রী সাইফুুজ্জামান চৌধুরী, এলজিআরডিমন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, হুইপ ইকবালুর রহিম, আতিউর রহমান আতিক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, সাবেক চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজসহ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিবৃন্দ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শরিক হন।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পীকার ছাড়াও সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।
প্রয়াত প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক ১৯৪২ সালের ১২ ডিসেম্বর বগুড়া জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে বগুড়া ভি এম গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৫৮ সালে ঢাকার হলিক্রস কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি ও তার স্বামী এ এস এইচ কে সাদেক আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে তিনি কেশবপুর মহিলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং তখন থেকে তিনি ওই কমিটির ১ নম্বর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ মহিলা কল্যাণ পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হলে তাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ইসমাত আরা সাদেকের স্বামী এ এস এইচ কে সাদেক সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ছিলেন। সাবেক এই সচিব এইচ কে সাদেক আওয়ামী লীগ থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।