কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। নতুন ধরন ওমিক্রনে সারাবিশ্ব করোনা পরিস্থিতি অবনতির মধ্যে বাংলাদেশেও নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার বৃদ্ধির গতি উদ্বেগজনক। চলতি বছরে প্রথম দিনে নতুন রোগী শনাক্তের হার ছিল তিন শতাংশের নিচে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই হার বেড়ে প্রায় ৬ শতাংশে পৌঁছেছে। খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগামী দু-একদিনের মধ্যে কঠোর বিধিনিষেধের ঘোষণা আসতে পারে। সংক্রমণ ঠেকাতে পরামর্শ কমিটির সুপারিশ মেনে এটি করা হবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। যা চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি। ওমিক্রনের কারণে পার্শ্ববর্তী ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও রোগী শনাক্তের সংখ্যা ও হার বাড়ছে। গত ৭ জানুয়ারি নতুন রোগী শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ৬ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ৫ জানুয়ারি ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, ৪ জানুয়ারি ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, ৩ জানুয়ারি ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ২ জানুয়ারি ২ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং ১ জানুয়ারি বছরের প্রথম দিনে শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ টানা করোনায় নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে নতুন রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ১১৬ জন। করোনায় এ পর্যন্ত দেশে ২৮ হাজার ৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৯২ হাজার ২০৯ জনে।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। শুক্রবার দেশে করোনায় ১ জনের মৃত্যু হয়। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হন ১ হাজার ১৪৬ জন। এদিন শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৫৮৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৯ হাজার ২৭৫টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
নতুন আক্রান্তের মধ্যে রাজধানীর ঢাকার রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে রাজধানীতে মোট ৯৪৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ আক্রান্তের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৪৯ শতাংশই রাজধানীর।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, রাজধানীতে ওমিক্রনের গুচ্ছ সংক্রমণ হয়েছে। কারণ নতুন আক্রান্ত ওমিক্রন রোগীদের দেশের বাইরে যাওয়ার ইতিহাস নেই। তাই দেশীয় সংক্রমণের কারণে ওমিক্রনের বিস্তার ঘটছে। যদিও নতুন আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত।
করোনায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ায় সংক্রমণ ঠেকাতে কারিগরি কমিটির প্রস্তাবনা অনুযায়ী দু-একদিনের মধ্যেই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জাহিদ মালেক ঢাকার বাইরে একটি অনুষ্ঠানে আরও বলেন, দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আগের চেয়ে ৪০০ গুণ বেশি। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো পরিস্থিতি এখনও হয়নি। আক্রান্তের হার অতিরিক্ত বাড়লে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলো পুনরায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডেল্টার মতো ওমিক্রনও মোকাবেলা করা হবে। তবে রোগী ধারণক্ষমতার বেশি হলেই সমস্যা হবে। সেই সমস্যা এড়াতে সবাইকে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। গেল বছরের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।