৩০ ডিসেম্বর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ॥ ১ জানুয়ারি হাতে হাতে পৌঁছাবে বই

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
হাতে গোনা আর মাত্র কয় দিন বাকি। এরপরই নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা হবে দেশের সব স্কুলের শিক্ষার্থী। করোনা মহামারীর কারণে গতবছর বহুল কাক্সিক্ষত বই উৎসব না হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় চলতি বছর এ লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে সব প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে গেছে বেশির ভাগ বই। ইংরেজী বছরের সমাপনীর আগের দিনই বই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে ১ জানুয়ারি দেশজুড়ে পালিত হবে বই উৎসব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু বই ছাপানোর বাকি থাকলেও বই উৎসবের লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত স্কুলে স্কুলে পৌঁছে গেছে প্রায় এক তৃতীয়াংশ বই। বাকিগুলোও ডিসেম্বরের ২৫ তারিখের মধ্যেই পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তুক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটির মতো শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপার কাজ করছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের মোট বই ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ২০২টি। আর প্রাথমিক স্তরের মোট বই প্রায় ১০ কোটি। প্রাথমিক স্তরের সব বই ছাপা হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গেলেও মাধ্যমিকের এখনও ছাপার বাকি প্রায় ৭ কোটি বই।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির উপদেষ্টা তোফায়েল খান বলেন, মোট ৩৫ কোটি বইয়ের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৭ কোটি বই ছাপানোর এখনও বাকি। এনসিটিবির দরপত্রের বিধি মোতাবেকই জানুয়ারি মাস পুরোটা ছাপানো এবং সরবরাহ করা যাবে। তাই আমরা মনে করছি এ বছর অর্থাৎ পহেলা জানুয়ারির আগে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাবে না। তিনি বলেন, মাধ্যমিকের জন্য আমাদের ওয়ার্ক অর্ডারের মেয়াদ আছে জানুয়ারি পর্যন্ত। তবে প্রাথমিকের জন্য মেয়াদ শেষ। একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের কিছু জটিলতা ছিল যেটির নাম অগ্রণী প্রকাশনী। তারা বই সরবরাহের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছে। তাদের ৩ সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের সময় বাড়ানো হয়েছে। তাদের বই ১ জানুয়ারির মধ্যে যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এতে করে প্রাথমিকের অন্তত ১০ শতাংশ বই বাকি থাকবে বলে আমরা অনুমান করছি। এছাড়া, মাধ্যমিকের বইয়ের ক্ষেত্রে অষ্টম ও নবম শ্রেণীর বই ছাপানোর জন্য এনসিটিবি থেকে ৯ নবেম্বর থেকে ৮৪ দিন সময় বেঁধে দেয়া আছে। আর ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণীর জন্য ৯ নবেম্বর পর্যন্ত ৭০ দিন সময় দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। তবে জাতীয় স্বার্থে আমরা বইগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরবরাহে চেষ্টা করছি। এখানে এনসিটিবির অদূরদর্শিতাই বলেন, সিদ্ধান্তহীনতা বা সময়ক্ষেপণ বলেন আমরা মনে করছি, শতভাগ বই যাবে না। তবে আমরা আশা করছি, বই উৎসব হবে। বই উৎসবের জন্য ১ বই হলেই হবে। কিন্তু পাঠদান শুরু করা সম্ভব হবে না। সব বই না হলে তো পাঠদান কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির এই নেতা আরও জানান, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের বই ছাপানোর কাজ শুরু এবং শেষের দিকে থাকলেও প্রি-প্রাথমিকের ওয়ার্ক অর্ডারই এখনও হয়নি। এর জন্য পুনঃ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে গত ৮ ডিসেম্বর। এখনও ওয়ার্ক অর্ডার ইস্যু হয়নি। তাই এটির ছাপার কাজ শুরু করা সম্ভবই হয়নি। যদিও অনুশীলন খাতা সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু পাঠ্যবই ছাপা শুরু হয়নি এখনও। এক্ষেত্রে এই শ্রেণীর বই কবে নাগাদ সরবরাহ করা সম্ভব হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।
তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নতুন বছরের আগেই সব নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে বলে দাবি করেছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, মাধ্যমিকের প্রায় ২৫ কোটি বইয়ের মধ্যে প্রায় ১৯ কোটি বই চলে গেছে দেশের বিভিন্ন স্কুলগুলোতে। আমরা আশা করছি ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি বইগুলোও চলে যাবে। আর এর প্রেক্ষিতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক হতে পারে বই উৎসবও। তবে বই উৎসবের বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ৩২ লাখ ৬৯ হাজার ৫৩৫ জন শিক্ষার্থীকে ৬৬ লাখ ৬ হাজার ৪৮০টি বই বিনামূল্যে বিতরণের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। একইভাবে এই শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের ১ কোটি ৯৪ লাখ ৩৩ হাজার ১৯৩ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই দেবে ৯ কোটি ৩০ লাখ ২৮ হাজার ১৭৭টি। এছাড়া ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর ৯৩ হাজার ৯৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য বইয়ের সংখ্যা ধরেছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৪টি। ফলে শুধু প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক স্তরের মোট ২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৮২২ জন শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার ২১টি। এছাড়া, মাধ্যমিক ও ইবতেদায়ি স্তরের ৩৫ লাখ ৪ হাজার ১১৩ শিক্ষার্থীকে সরবরাহ করা হবে ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ৮৯২টি বই। একই শিক্ষাবর্ষে দাখিল স্তরের ২৭ লাখ ১২ হাজার ২ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই দেবে ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৮৩টি। তবে বিনামূল্যে সরবরাহের সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি বই বিতরণ হবে মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজী ভার্সন) স্তরে। এই ধাপের ১ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার ৯০৫ জন শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭৭টি বই। এছাড়া, ২০২২ শিক্ষাবর্ষে কারিগরি স্তরে ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮ জন শিক্ষার্থীকে ২৪ লাখ ৪২ হাজার ৮৫৮টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। একইভাবে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল স্তরে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮৩ জন শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে ৩৩ লাখ ১৫ হাজার ১৯২টি বই। এছাড়া ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক ৮ হাজার ৫৪টি দেয়া হবে ৯৬৩ জন শিক্ষার্থীকে। এতে করে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে মোট ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে মোট বই বিতরণ করা হবে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার ২৭৭ টি। এর আগে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে একইভাবে মোট ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি বই। ফলে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের চাইতে ২০২২ শিক্ষাবর্ষে বইয়ের চাহিদা বেড়েছে ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৫টি। এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনসিটিবি সূত্রে আরও জানা যায়, আলাদা আলাদা দরপত্রের মাধ্যমে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজী ভার্সন), ৮ম ও ৯ম শ্রেণী, ইবতেদায়ি স্তরের ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণী, দাখিল স্তরের ৮ম ও ৯ম শ্রেণী এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হবে ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৯৭১ কপি, মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজী ভার্সন) স্তরের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণী, ইবতেদায়ি স্তরের ১ম ও ২য় শ্রেণী দাখিল স্তরের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীর এবং কারিগরি ( ট্রেড বই) স্তরে দেয়া হবে ১ কোটি ৭ লাখ ৫২ হাজার ৮৪০ কপি, মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজী ভার্সন) স্তরের ৮ম ও ৯ম শ্রেণী ইবতেদায়ি স্তরের ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণী, দাখিল স্তরের ৮ম ও ৯ শ্রেণী এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল স্তরে ১০ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার ২৪৮ কপি, মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজী ভার্সন) স্তরের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণী ইবতেদায়ি স্তরের ১ম ও ২য় শ্রেণী দাখিল স্তরের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীর এবং কারিগরি (ট্রেড) স্তরে ১১ কোটি ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৫ কপি, মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজী ভার্সন) স্তরের ৮ম ও ৯ম শ্রেণী ইবতেদায়ি স্তরের ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণী, দাখিল স্তরের ৮ম ও ৯ম শ্রেণী এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল স্তরের ১০ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৮ কপি, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যের ব্রেইল পুস্তক ৮ হাজার ৫৪টি কপিসহ মোট ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৬ কপি বইয়ের জন্য মোট ৬শ’ ৭৬ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৬৩৪ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।