কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা মহামারী কাটিয়ে এবার পূর্ণোদ্যমে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা। আগামী ১৯ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা চলবে ৬ জুলাই পর্যন্ত। মহামারী কাটিয়ে উঠলেও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষাও হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই। গত বছরের চেয়ে ২ লাখ ২১ হাজার ৩৮৬ জন পরীক্ষার্থী কমে এ বছর পরীক্ষায় বসছে মোট ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থী। আসন্ন এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার কারণে আগামী ১৫ জুন থেকে পরবর্তী তিন সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে দেশের সব কোচিং সেন্টার।
এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আগামী ২৫ জুনের এসএসসি পরীক্ষা (ইংরেজী দ্বিতীয় পত্র) ২৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় মনিটরিং ও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভা শেষে এসব তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। তিনি জানান, ২০২২ সালের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এ পরীক্ষা নেয়া হবে। পরীক্ষার সময় তিন ঘণ্টার বদলে দুই ঘণ্টা (বহু নির্বাচনী ২০ মিনিট ও নির্বাচনী ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট) করা হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ৬০ দিনের মধ্যে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী জানান, এ বছর সাধারণ নয়টি বোর্ডের অধীনে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডের আওতায় মোট পরীক্ষার্থী ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৯৯৮ জন। এছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ জন, কুমিল্লায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭১৪ জন, যশোরে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৭ জন, চট্টগ্রামে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭১০ জন, বরিশালে ৯৫ হাজার ৯৭৬ জন, সিলেটে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন, দিনাজপুরে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬১ জন এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৪৮ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে।
অন্যদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৯ হাজার ৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবে। মোট ৭১৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ জন। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ২ হাজার ৮১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ জন পরীক্ষার্থী দেশের ৮২৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেবে।
দীপু মনি জানান, ২০২১ সালের তুলনায় চলতি বছর মোট পরীক্ষার্থী কমেছে ২ লাখ ২১ হাজার ৩৮৬ জন। তবে গত বছরের চেয়ে এবার মোট ৫৫৬টি প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। এছাড়া মোট পরীক্ষা কেন্দ্র বেড়েছে ১১১টি।
এদিকে, দেশের বাইরের ৮টি স্থানে ৩৬৭ জন পরীক্ষার্থীর জন্য এ পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। এর মধ্যে সৌদি আরবের জেদ্দায় ৭০ ও রিয়াদে ৪৮ জন, কাতারের রাজধানী দোহায় ৬৮ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে ৫৯ ও দুবাইতে ৩১ জন, বাহরাইনে ৫৩ জন, ওমানে ৩৪ এবং লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলীতে ৪ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে প্রবেশ করতে হবে। যদি কেউ এরপর প্রবেশ করতে চায়, তবে গেটে রেজিস্ট্রার খাতায় দেরির কারণ উল্লেখ করে ভেতরে যেতে হবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য অতিরিক্ত মোট ২০ মিনিট বাড়তি সময় দেয়া হবে।
এ সময় কোচিং সেন্টার বন্ধের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোচিং সেন্টারগুলোকে নজরদারির আওতায় আনা হবে। এমনিতে পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকে। তবে যারা গোপনে খোলা রাখেন তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোচিং সেন্টার স্থায়ীভাবে বন্ধের উদ্যোগ আছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোচিং শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর তা আমরা বলছি না। সব শিক্ষার্থীর মেধা এক থাকে না। অনেক শিক্ষার্থীর ক্লাসের বাইরে সহযোগিতা প্রয়োজন। শ্রেণীকক্ষে যাদের সব চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না তাদের জন্য কোচিং প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, কোন কোন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে মনোযোগ না দিয়ে কোচিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কোচিং না করলে নম্বর কমিয়ে দেন তাও অনৈতিক। তবে কোচিংয়ের ধরন পাল্টানো হবে। কোন শিক্ষক যদি শ্রেণীকক্ষের বাইরে ভাল শেখান তা কি বন্ধ করা সম্ভব? তবে কোন শিক্ষক যাতে শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে বাধ্য না করেন সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নতুন শিক্ষাক্রম প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম এ্যাপভিত্তিক। শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন মূল্যায়ন নম্বর দিতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের প্ল্যান রয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে তারা এতে অভ্যস্থ হয়ে যাবেন।
এদিকে আগামী ২৫ জুন প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী সাধারণ নয় শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসির ইংরেজী (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্র, মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিলের বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং কারিগরি বোর্ডের ভোকেশনালের এসএসসি ও দাখিলের গণিত পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সেই পরীক্ষা আগের দিন অর্থাৎ ২৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, শুধু একটি পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। অন্য সব পরীক্ষা নির্ধারিত রুটিন অনুযায়ী আয়োজন করা হবে।
এ সময় অননুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর থাকবে না দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যত্রতত্র গড়ে ওঠা অননুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে অন্যসব প্রতিষ্ঠানের মতো হুট করেই এসব বন্ধ করে দেয়া যায় না। পরিকল্পনা করে বন্ধের একটি রূপরেখা তৈরি করার চেষ্টা চলছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অননুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আমরা সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে অনুমোদনহীন বেশিরভাগই প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাখা হবে না। প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করব। আর নিম্ন মাধ্যমিক থেকে উচ্চ পর্যায়ের অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে যুক্ত করতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
যত্রতত্র গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেনকে নীতিমালায় আনার প্রসঙ্গে দীপু মনি বলেন, নতুন শিক্ষা আইনে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। দেশীয় কারিকুলামে সহজে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায় না। এ কারণে কেউ কেউ ইংরেজী কারিকুলাম বা অন্য উপায়ে যত্রতত্র এসব প্রতিষ্ঠান খুলছে।
নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত সময়ে তালিকা প্রকাশ করা হবে। পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে অনেকে যানজটের কবলে পড়ে থাকেন বলে অভিযোগ করা হয়। সে কারণে আগামী বছর থেকে সেটি সমন্বয় করে পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করে পেছানো হবে।
এ বছর এসএসসি-সমমান পরীক্ষা জুনে নেয়া হচ্ছে। তবে আগামী বছর সেটি আরও এগিয়ে আনা হবে বলেও জানান দীপু মনি।