শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, “প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনার কেলই বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন।”
সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে “আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে” নির্বাচনকমিশনে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও, গত ৫০ বছরে কোনো সরকারই এমন একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। গত দুটি নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আগে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে দুটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। এড হক ভিত্তিতে সৃষ্ট ওই দুটি অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশে গঠিত রকিব উদ্দিন কমিশন ও নূরুল হুদা কমিশন তাদের চরম পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের মাধ্যমে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে জনগণের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের উপর ব্যাপক অনাস্থা এবং সুষ্ঠুনির্বাচনের ব্যাপারে তীব্র শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমান নূরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হবে, তাই নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের উদ্যোগ এখনই শুরু করতে হবে, যার প্রাথমিক পদক্ষেপ হবে সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করা। এ ব্যাপারে অনতিবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবেও সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত থেকে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সব ধরনের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। একইসঙ্গে অনুরোধ জানাচ্ছি নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করতেপারে সে ব্যাপারে সংস্কার পদক্ষেপের কথা এখন থেকেই ভাবতে।
প্রস্তাবিত আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনারদের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারিত করতে ও একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের বিধান রাখতে হবে। এই অনুসন্ধান কমিটি দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হতে হবে, যাতে সকল নির্বাচনী অংশীজনদের কাছে এটি গ্রহণযোগ্যতা পায়। গঠিত অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব হবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আইনে বিধৃত যোগ্যতার মানদন্ডের আলোকে কিছ ুসৎ, নির্দলীয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের একটি প্যানেল নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছেসুপারিশ করা। স্বচ্ছতার অংশ হিসেবে কোন কোন ব্যক্তিদেরকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য অনুসন্ধান কমিটি প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করছে তাদের নাম প্রকাশও গণ শুনানীর আয়োজন করা এবং কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের জন্য সে সব নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে তার একটি প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করার বিধান আইনে রাখতে হবে।
আমরা আশা করি যে সঠিক ব্যক্তিদেরকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশ ক্রমে আইন মন্ত্রণালয় একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করবে। নাগরিক হিসেবে মতামত প্রদানের মাধ্যমে আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে পারি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, অবসরপাপ্ত মহাহিসাব-নিরীক্ষক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বিচারপতি আব্দুল মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এমসাখাওয়াত হোসেন, মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম জুমদার, সাবেকসচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আবু আলম শহীদ খান, সাবেক সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মহিউদ্দিন আহমদ, অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক পারভীন হাসান, স¤পাদক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ড. ইফতেখারুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট জেড. আই খান পান্না, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ড. শাহদীন মালিক, সাবেক সভাপতি, ফেমা মুনিরা খান, সদস্য, নারীপক্ষ শিরিন হক, সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি সালমা আলী, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ব্যারিস্টার সারা হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন শাহীন আনাম, কান্ট্রি ডিরেক্টর, একশন এইড ফারাহ কবির, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মির্জা তাসলিমা সুলতানা, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল, সাধারণ স¤পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সঞ্জীব দ্রং, আলোকচিত্র শিল্পী ড. শহিদুল আলম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্রতী শারমিন মুরশিদ, নির্বাহীপরিচালক, এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ডরিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট শামসুল হুদা, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সি.আর আবরার, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক আসিফ নজরুল, লেখক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক আকমল হোসেন, অধ্যাপক ও গবেষক, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন অধ্যাপক স্বপন আদনান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবুসাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোনোয়ার কামাল, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ক্লিনিকাল নিউরোসাইন্স সেন্টার, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধীফাউন্ডেশন এর পরিচালক অধ্যাপক নায়লা জামান খান, নাগরিক উদ্যোগ এর প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আর্টিকেল ১৯ এর আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর সিনিয়র ডিরেক্টর ড. আব্দুল আলিম মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন প্রমুখ। (খবর সংবাদদাতার)