সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন, ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ॥ সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ, লড়ছেন ৪ প্রার্থী

10

স্টাফ রিপোর্টার :
আজ শনিবার সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ সুরমায়, ফেঞ্চুগঞ্জে ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনে ১৪৯টি কেন্দ্রে ৩ লাখ ৫২ হাজার ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আসনটিতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে।
এ আসনের ৪ প্রার্থীরা হচ্ছেন, আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব (প্রতীক নৌকা), জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক (প্রতীক লাঙ্গল), বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরী (প্রতীক কার) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া (প্রতীক ডাব)।
এদিকে এই আসনে ইতিপূর্বে ভোটের মাঠে শেষ উত্তাপ ছড়িয়ে গেছেন নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা। নিজ নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণার সমাপ্তি টেনেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু। প্রচারযুদ্ধের পর এবার চলছে ভোটের হিসেব-নিকেষ। শেষ সময়ে এসে নির্বাচনে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিরব ভোটাররা। প্রায় দুই মাসের প্রচারণা থেমেছে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায়। প্রতীক বরাদ্দের পর দুই মাস ৮ দিন প্রার্থীরা এলাকায় চষে বেড়িয়েছেন। লকডাউনের মধ্যে প্রচারণায় নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ওই সময়েও নানা কৌশলে তারা চালিয়ে গেছেন প্রচারণা। কিন্তু দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যেও সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ তৈরি করতে পারেননি প্রার্থীরা।
সূত্র জানায়, আসনটির অন্তত ৬০ ভাগ ভোটার এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থীকেই প্রকাশ্যে সমর্থন জানাননি। শেষ পর্যন্ত তারা ভোট দিতে যাবেন কি-না তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। মুখবন্ধ এসব ভোটার নিয়ে প্রার্থীরাও রয়েছেন মহাটেনশনে। ভোট দিতে গেলে তারা কাকে দেবেন- এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সকল প্রার্থীই সাধারণ ভোটাররা নিজেদের পক্ষে রয়েছেন দাবি করলেও ভেতরে ভেতরে নিরব ভোটারদের নিয়ে টেনশন কাটছে না তাদের। নিরব ভোটাররা ভোট বিপ্লব ঘটাতে পারেন এমন আশঙ্কায় রয়েছেন প্রার্থীরা। তবে রাজনীতি সচেতন মহলের ধারণা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকে ঘিরে নিরব থাকা এসব ভোটার ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। আর নিরব ভোটারের যে অংশ ভোট কেন্দ্রে যাবে তাদের বেশিরভাগই দলীয় প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীর যোগ্যতা ও এলাকার উন্নয়নের বিষয়টিই বিবেচনায় রাখবে। সবমিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের বেশি ভোট কাস্ট না হওয়ার সম্ভাবনাই দেখছেন সচেতন মহল।
এদিকে, শুরুতে স্থানীয় নেতাদের উপর ভর করে প্রচারণা চালিয়ে যান জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক। কিন্তু শেষমেশ তার পক্ষে মাঠে নামেন কেন্দ্রীয় মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি সিলেট এসে গত বৃহস্পতিবারের সকাল পর্যন্ত সকাল টানা ৪দিন প্রচারণায় অংশ নেন। এরশাদের দ্বিতীয় বাড়ি সিলেট উল্লেখ করে সাধারণ ভোটারদের কাছে লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। বিভিন্ন স্থানে তার আবেগঘন বক্তব্য ভোটারদের মনে নাড়া দেয়।
এদিকে, দলীয়ভাবে বিএনপি অংশ না নিলেও সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনকে ঘিরে শুরু থেকেই উত্তাপের কমতি ছিল না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণ নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ করে। হাবিবুর রহমান হাবিবের পক্ষে প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় দুই ডজন নেতা ব্যাপক প্রচারণা চালান। দ্বিতীয় দফায় গত বুধবার সিলেট আসেন জাহাঙ্গীর কবীর নানক। গত বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তিনি নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন।
এদিকে, দল থেকে বহিষ্কার হওয়ায় কোন নেতা সাথে না থাকলেও থেমে থাকেননি শফি আহমেদ চৌধুরী। বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী ও সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে তিনি চালিয়ে গেছেন প্রচারণা। অপরদিকে, নির্বাচন ঘিরে ভোটের দিন ও পূর্বাপর সবধরণের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনারোধে শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন।
সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের জানান, ভোট গ্রহণের দিন কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ (একাংশ) উপজেলা। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে থাকবেন পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭ থেকে ১৮ সদস্য। আর ঝুঁঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবেন ১৮ থেকে ১৯ সদস্য। তাদের মধ্যে পুলিশ আর অঙ্গীভূত আনসার সদস্যের কাছে অস্ত্র থাকবে। তারা সার্বক্ষণিক ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেবেন। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স ২১টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১২টি, র‌্যাবের ১২টি টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে ২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বিজিবির সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন যে কোনো অনাকাঙ্গিক্ষত ঘটনা মোকাবিলায়।
ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত রাখা হবে ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অন্যদিকে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনা কক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে।