স্টাফ রিপোর্টার :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গোটা দেশবাসীর কাছে আধ্যাত্মিক নগরী হিসেবে সিলেট যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি দল হিসেবে বিএনপির কাছেও সিলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মহান মুক্তিযুদ্ধে সিলেট মুক্ত করতে সমরযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি সেই সময়ে আমাদেরকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়তে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য কষ্টকর। যার স্বাধীনতা ঘোষণায় দেশের আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যার হাত ধরে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সিলেট মুক্ত করার সেই মহানায়ক ১১নং সেক্টর কমান্ডার জেড ফোর্সের প্রধান জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য স্ত্রী তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ গৃহবন্দী। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এমন দেশের জন্য কি মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমাদের তরুণ প্রজন্ম এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে। সিলেটের তরুণ প্রজন্মের কাছে শহীদ জিয়া ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতেই এই আয়োজন। অবরুদ্ধ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির জন্য গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিতে হবে। আর এর সূচনা সিলেট থেকেই হবে।
শনিবার ১৮ ডিসেম্বর নগরীর ঐতিহাসিক রেজিষ্ট্রারী মাঠে ১৫ ডিসেম্বর সিলেট মুক্ত দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, সরকারীভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিজয়ের ৫০ বছরপূর্তি পালন করা হচ্ছে। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক সিলেটের কৃতি সন্তান এমএজি ওসমানী, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান, এমনকি মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকারের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিনের মতো ব্যক্তিদের নামটা উচ্চারণ হচ্ছেনা। এক ব্যক্তি ও একটি দলকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ইচ্ছেমতো বিতর্কিত করা হচ্ছে। তারা জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের কৃতিত্ব আড়াল করতে গিয়ে গোটা ইতিহাসকে লুট করে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস লুটেরাদের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন করেছিলেন স্বাধীনতার যুদ্ধের জন্য। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতেও নতুন করে দেশকে স্বাধীন করার শপথ নিতে হবে।
সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সিলেট বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাবেক মন্ত্রী বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দাকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম), স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী মাওলানা সালেহ আহমদ। অনুষ্ঠানে সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে গণসংগীত পরিবেশন করেন উপস্থিত শিল্পীবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন অতিষ্ঠ। ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানোর অঙ্গিকার করা সরকার এখন ৭০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াচ্ছে। তারা ভোটে নয়, লুটে ক্ষমতায় বসেছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার ক্ষমতায় আরোহন দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দেশকে আর নিচে নামাবেন না। ক্ষমতায় ছাড়তেই হবে। সময় আর বেশীদিন নেই। সরকার ফের নির্বাচন নির্বাচন খেলা শুরু করেছে। আমাদের বক্তব্য পরিস্কার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবেনা। অধিকার এমনি এমনি আসেনা। অধিকার আদায় করে নিতে হয়। একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এই অভ্যূত্থান সিলেট থেকেই শুরু হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সাথে শহীদ জিয়ার নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যতই ইতিহাস বিকৃত করুন না কেন স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে জিয়াকে মুছে ফেরার সাধ্য কারো নাই। জিয়াউর রহমানের বীরোচিত নেতৃত্বে সিলেট মুক্ত হওয়ার ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। শহীদ জিয়ার শাসনামলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তিত হলে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগ নামক দলটির পুন:নিবন্ধন করে রাজনীতি করার সুযোগ নেন। এই ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী ও মেজর জিয়াউর রহমানের তত্তাবধানে ১৫ ডিসেম্বর সিলেট হানাদার মুক্ত হয়। আমাদের সাথে ভারতীয় মিত্রবাহিনীও যোগ দিয়েছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য যে যুদ্ধ করেছে আমাদের আপামর জনতা কিন্তু পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আমাদেরকে রাখা হয়নি। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছি। এবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঝাঁপিড়ে পড়ি। এবারও আমরা বিজয়ী হবো।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের দল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে বাধা দেয়ার মাধ্যমে ক্রমশই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমাদের নেত্রীর কিছু হলে দেশের পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি.কে গৌছ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য নাসের রহমান, সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী প্রমুখ।