সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পরও বেড়েছে তেল-চিনি ও ডালের দাম

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে দেশে তেল-চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এ জন্য বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম বাড়ায় অস্বস্তিতে রয়েছেন নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষ।
জানা গেছে, গত একমাসে চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। বর্তমানে চিনির খুচরা মূল্য ৮০ টাকা। একই অবস্থা মসুরের ডালেও। দাম বেড়ে মসুরের ডাল এখন ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আটা ও ময়দার দামও বেড়েছে কেজিতে ২-৪ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে তেলের দামের ক্ষেত্রে আমদানি মূল্যের সঙ্গে স্থানীয় মূল্য পর্যালোচনা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন, অপরিশোধিত পাম ও অপরিশোধিত চিনির মূল্য ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে। এছাড়াও ব্যয় বেড়েছে পণ্য পরিবহনে। এমএস পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল এইচএমএস, এইচবিআই ও পিগ আয়রনের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে।
এছাড়াও অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনে স্পেসিফিক ডিউটি ৩ হাজার টাকা, আরডি ৩০ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ ও এটি ৪ শতাংশ আরোপিত রয়েছে। আমদানি করা যেসব পণ্যের দাম অসহনীয়, সেগুলোর শুল্ক কমানোর বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেবে মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল তেলের মূল্য নিয়ে একটি পর্যালোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে দিগুণ হয়েছে। এরপরেও আমাদের জাতীয় কমিটি আছে, সেখান থেকে প্রতিবেদন এসেছে। জাতীয় কমিটিতে বসে আমরা ফাইনাল প্রতিবেদন করবো। আমাদের যেটা প্রাইজ আছে, ১৪৯ টাকা বোতল। এখনও সেটাই আমাদের মূল্য আছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, আমাদের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই, সরবরাহ যথেষ্ট আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের যে বার্ষিক চাহিদা তার থেকেও বেশি সরবরাহ রয়েছে। তবে অনেকগুলো পণ্য আমদানি নির্ভর, তাই আমদানি মূল্য বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে যাতে স্থানীয়ভাবে দাম বৃদ্ধি ও মজুত করা না হয় সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্যক্রম সম্পর্কে সচিব বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবে আমরা টিসিবির অপারেশন গত বছরের তুলনায় আড়াই গুণ বাড়িয়েছি। টিসিবি আরও কয়েকটি পণ্য বিক্রি করছে। আগামী মাস থেকে পেঁয়াজসহ আরও পণ্য বিক্রি শুরু হবে। আমরা সেখানেও আমদানি করছি। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাতে দেশের বাজারে আমদানি পণ্য বেচাকেনা হয়, সেজন্য মনিটরিং জোরদার করা হবে। কেউ অন্যায়ভাবে বেশি দাম নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চিনির দামের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে চিনির খুচরা মূল্য ৮০ টাকা। ৭৫-৮০ টাকা নির্ধারিত আছে। টিসিবিতে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কমানোর একটা হতে পারে শুল্ক কমানো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে এ ধরনের প্রস্তাব আগেও ছিল। আমরা এখন আবার একটা প্রস্তাব দেব। যেসব পণ্যের দাম অসহনীয়, সেগুলো পর্যালোচনা করতে আমি এনবিআরকে অনুরোধ করব।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় আমরা খুব অসুবিধায় আছি। যারা ভোক্তা, আমাদের আয় কমেছে ব্যয় বাড়ছে। এতে আমরা যারা নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত, আমাদের সঞ্চয় যা ছিল তা শেষ। এখন ধার করে চলছি। আমাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।