শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবসা, চাকরিÑনানা কারণে বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা ইউরোপ, আমেরিকায় পাড়ি জমায়। কিন্তু ইউরোপ গমনের সেই ধারাটি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর প্রধান কারণ অবৈধ অভিবাসন। যেসব দেশ তাদের অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না, সেসব দেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদানের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিল। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কাউন্সিলের বিশেষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
জানা যায়, বৈঠকে অবৈধ অভিবাসী প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের সময় বাংলাদেশের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। কারণ আগে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, লিবিয়া ও এর প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপে যাওয়া অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে তৃতীয় শীর্ষ স্থানে। অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ২০১৭ সালে ইইউর সঙ্গে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষর করে। সেই এসওপির আওতায় অবৈধ অভিবাসীদের পরিচয় যাচাই সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে ফিরিয়েও আনছে বাংলাদেশ। কিন্তু কভিড মহামারির প্রথম বছরে সেই প্রক্রিয়ায় কিছুটা ভাটা পড়লে তখনো ইইউ বাংলাদেশিদের ভিসার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপের হুমকি দিয়েছিল। পরে বাংলাদেশ ওই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করায় ইইউ তার কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসে। তা সত্ত্বেও ইইউভুক্ত দেশগুলোতে এখনো অনেক বাংলাদেশি অবৈধভাবে অবস্থান করছে। অন্যদিকে যে পরিমাণ অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত আনা হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করছে।
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে মানবপাচারের একটি প্রধান রুট হচ্ছে লিবিয়া-তিউনিশিয়া চ্যানেল। লিবিয়ায় লোক পাঠানো বন্ধ থাকায় পাচারকারীরা বাংলাদেশিদের প্রথমে দুবাই বা কাছাকাছি কোনো শহরে নেয়। পরে লিবিয়ায় নেয়। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের শুরু থেকে পরবর্তী ১৮ মাসে শুধু দুবাইয়ের ভ্রমণ ভিসা নিয়ে এক লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৪ জন নারী ও পুরুষ দেশ ছেড়েছে। তাদের মধ্যে ফেরত এসেছে মাত্র ২১ হাজার ৭৫৪ জন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও বাকি এক লাখ ৭৮ হাজার ফিরে আসেনি। ধারণা করা হয়, তাদের মূলত ইউরোপে পাচার করা হয়েছে। এই ধরনের মানবপাচার আমাদের অভিবাসনকেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, দেশের ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণœ করছে। তাই অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি মানবপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।