আজ আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে সেই মর্মান্তিক, বেদনার্ত দিন। আজ থেকে ১৭ বছর আগে এই দিনে ২১ আগষ্টে ঘাতকচক্রের নিক্ষিপ্ত ভয়াল গ্রেনেড হামলায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হেরে যান নারী আন্দোলনের পুরোধা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বেগম আইভি রহমান। সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী বেগম আইভি রহমানের আজ ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী।
হাজারো নেতাকর্মীর সঙ্গে স্বামী জাতীয় নেতা প্রয়াত জিল্লুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গিয়েছিলেন সংগ্রামী নারীনেত্রী আইভি রহমান। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ট্রাকের মঞ্চে যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন তার নিচেই মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে শ্লোগান দিয়ে মুখরিত রাখছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলায় নিমিষেই সবকিছু শেষ হয়ে যায় আইভি রহমানের। ঘাতকের নিক্ষিপ্ত একটি গ্রেনেড ঠিক তাঁর পায়ের কাছে বিস্ফোরিত হয়। একটি পা উড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুরো শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায় তাঁর। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা আহত এই নারী নেত্রীকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আইভি রহমানের চিকিৎসা নিয়েও শুরু হয় লুকোচুরি খেলা। তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর অবশেষে মৃত্যুর কাছেই হার মানেন আইভি রহমান। ওই হিংস্র দানবীয় হামলায় রাজপথের এই অকুতোভয় নেত্রীসহ ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হন।
বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানের পুরো নাম জেবুন নাহার আইভি। ১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই ভৈরবের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। আইভি রহমান ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন তুখোর ছাত্রনেতা জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ৮ বোন ৪ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। তাঁর একমাত্র পুত্র নাজমুল হাসান পাপন বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-৭ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। আর দুই মেয়ে তানিয়া ও ময়না।
ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আইভি রহমান অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রীক রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য জীবন শুরু করেন। সদালাপী আইভি রহমান ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি ভারতে গিয়ে সশস্ত্র ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
আইভি রহমান ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে দলের জাতীয় কাউন্সিলেও তাঁকে একই পদে নির্বাচিত করা হয় এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এর আগে ১৯৮০ সাল থেকে কয়েক বছর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নারী অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ও সমাজের অবহেলিত শিশু প্রতিবন্ধীদের কল্যাণেও আইভি রহমানের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল।
শহীদ আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন সংগঠন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- সকালে বনানী কবরস্থানে তাঁর কবর জিয়ারত, শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও মোনাজাত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মসূচীতে অংশ নেবেন।