কোভিড-১৯ প্রতিষেধক ভ্যাকসিন অবশেষে দেশে তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় দেশীয় ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিডেটের সঙ্গে চীনের সিনোফার্মের ফর্মুলায় করোনার টিকা তৈরির জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশে তৈরি চীনের এই করোনা প্রতিরোধক টিকা বাজারে আসতে পারে আগামী তিন মাসের মধ্যে। সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই টিকা ইনসেপ্টা থেকে সরাসরি কিনে প্রয়োগ করবে জনসাধারণের মধ্যে গণটিকাদান কর্মসূচীর আওতায়। তাতে বিদেশ থেকে টিকা অথবা অনুদানের টিকার ওপর আর নির্ভর করতে হবে না। তদুপরি হবে মূল্য সাশ্রয়ী। ফলে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হবে না টিকা কেনার জন্য। এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আগামীতে অন্যান্য ওষুধ কোম্পানিও এগিয়ে আসতে পারে টিকা তৈরিতে। সরকারও উদ্যোগ নিতে পারে টিকা তৈরির জন্য। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প প্রায় স্বনির্ভর। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ কোম্পানি রয়েছে দেশে। চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ তৈরি হয় দেশেই। রফতানিও হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সংক্রামক হন্তারক ব্যাধি করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিষেধক টিকা তৈরির এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই ভ্যাকসিন আগামীতে রফতানি করা যেতে পারে বিদেশেও।
দেশে করোনা প্রতিরোধে চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে মে মাস থেকে। প্রথমবারের মতো এই টিকা দেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ রাজধানীর চারটি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও নার্সদের। পর্যবেক্ষণের পর এই টিকার প্রয়োগ শুরু হয় তালিকাভুক্ত মানুষদের মধ্যে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে চীন বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে কয়েক লাখ ডোজ টিকা উপহার দিয়েছে বাংলাদেশকে। ফলে দেশে চলমান টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগে আপাতত আর বাধা নেই। উল্লেখ্য, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ টিকা অর্থ পরিশোধসহ লিখিত চুক্তি থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে সরবরাহ করতে না পারায় বাংলাদেশের কাছে বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ ও কেনার কোন বিকল্প ছিল না। সরকার ইতোমধ্যে চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যালের গ্রুপ সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা আমদানির বাণিজ্যিক চুক্তিও সম্পন্ন করেছে। এই টিকার চালান দেশে আসছে ধাপে ধাপে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে জাতিসংঘ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে করোনার টিকা বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন, যেটি যথার্থ ও সময়োপযোগী। তবে দুঃখজনক হলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস চুক্তির আওতায় টিকার মেধা সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। ফলে সারা বিশ্বে টিকার সুষম বণ্টন ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে না। টিকা প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে উন্নয়নশীল ও গরিব দেশগুলো। দেশে প্রস্তুত টিকা ৮০ শতাংশ মানুষকে প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ যথাসময়ে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনে সক্ষম হবে বলেই প্রত্যাশা। বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতও তার প্রতিশ্রুতি তথা চুক্তির মর্যাদা রক্ষা করবে নিশ্চিয়ই।