জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে পনেরোই আগষ্ট দেশে দেশে বাঙালিরা শ্রদ্ধাপূর্ণ নানা আয়োজন করে থাকে। একদিকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের জন্য শোক জ্ঞাপন, অন্যদিকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আলোকপাত- এ দুটি বিষয়ই প্রধান উপজীব্য হয়ে ওঠে এসব আয়োজনে। এর ধারাবাহিকতায় এবার নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারের আয়োজনটি অনন্য হয়ে উঠেছিল। ঢাকার পরে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশের মানুষ যেসব শহরে বসবাস করছেন তার ভেতর লন্ডন ও নিউইয়র্কের নাম চলে আসে আগে। টাইম্স স্কয়ার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের কেন্দ্রস্থলে ম্যানহাটানে অবস্থিত একটি সড়ক চত্বর। এটি ওই শহরের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত পথচারী সংযোগস্থল এবং বিশ্ব বিনোদন শিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যকসহ প্রায় ৩ লাখ মানুষ টাইমস স্কয়ার দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। এই এলাকাটি রংবেরঙের বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা ও প্রোজ্বল সাইনবোর্ডের কারণেও বিখ্যাত। প্রতিবছর এখানে জাঁকজমকের সঙ্গে খ্রিস্টীয় নববর্ষ উদযাপিত হয়ে থাকে। এমন একটি সুপরিচিত ও ঐতিহ্যবাহী চত্বরে পনেরোই আগষ্টে বঙ্গবন্ধু স্মরণে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আয়োজন বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের কাছে অনুপ্রেরণায় ও গৌরবের হয়ে উঠেছে।
নিউইয়র্কবাসী প্রত্যক্ষদর্শী এক বাঙালির বয়ানে উঠে এসেছে এই ব্যতিক্রমী বিশ্ব আয়োজনের পূর্বাপর চিত্র। তিনি লিখেছেন, ‘তখন প্রায় মধ্যরাত। এর পরও নিউইয়র্কের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশী এসে জড়ো হচ্ছিলেন ম্যানহাটানের টাইমস স্কয়ারে। কেউ কেউ আসেন অন্য স্টেট থেকেও। অপেক্ষার প্রহর শেষে স্থানীয় সময় ১৫ আগষ্ট প্রথম প্রহরে স্কয়ারের আইকনিক বিলবোর্ডটিতে ভেসে উঠল বঙ্গবন্ধুর মুখ। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ আর দেশপ্রেমের ছবি দেখল বিশ্বের মানুষ। সেখানে উপস্থিত প্রবাসীরা শোক আর শ্রদ্ধায় স্মরণ করল বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতাকে।’ টাইমস স্কয়ারে স্থাপিত বিলবোর্ডে প্রদর্শিত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মনির্ভর চিত্র বা অডিও-ভিজুয়াল ক্লিপ। এই আয়োজনটি করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা এনওয়াই ড্রিমস প্রোডাকশন। উদ্যোক্তা ফাহিম ফিরোজ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন দেশের লাখো মানুষ জড়ো হয় টাইমস স্কয়ারে। জাতীয় শোক দিবসের দিনে বঙ্গবন্ধুর জীবন এবং সংগ্রামকে বিশ্বের মানুষের সামনে আমরা তুলে ধরতে পারছি এটিই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। আমরা মনে করি আগামী দিনে প্যারিস, মিউনিখসহ বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন মহানগরীতের দেশপ্রেমিক বাঙালিদের উদ্যোগে জাতির পিতার জন্মদিন ও শাহাদত বার্ষিকীতে এ ধরনের সৃষ্টিশীল আয়োজন করা হবে। যা স্থানীয় বাঙালি তো বটেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী বাঙালির হৃদয়ে বিশেষ অনুভূতি ও অনুরণন তুলবে। বাঙালি হিসেবে তারা গৌরব বোধ করবে। এই স্মরণের পথ ধরেই দেশের সমৃদ্ধিকল্পে আত্মনিয়োগ করবে বাঙালি জাতি। সেইসঙ্গে বিদেশীরাও নতুন করে চেনার সুযোগ পাবে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সোনার বাংলাকে।