দেশের ৪৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন

20

কাজির বাজার ডেস্ক
দেশের দরিদ্র ২০ শতাংশ পরিবার মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি সুবিধার ২০ শতাংশও ভোগ করতে পারে না। ৪৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা খরচ মেটাতে কোনো না কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন। দরিদ্র জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য সরকারের বরাদ্দও অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে দেশের স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে এসডিজি অ্যাকশন এলায়েন্স বাংলাদেশ।
রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টস ইউনিটির সাগর রুনি হলে আয়োজিত ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার অধিকার প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সমাজের অবস্থানপত্র শীর্ষক’ এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এসডিজি অ্যাকশন এলায়েন্স বাংলাদেশ, গেøাবাল কল টু অ্যাকশন এগেইনস্ট পোভার্টি ও নোয়াখালী রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এনআরডিএস)।
এসডিজি অ্যাকশন অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও এনআরডিএস’র প্রধান নির্বাহী আবদুল আউয়াল বলেন, ‘কোভিডের আগের ধারাবাহিকতায় বাজেটে স্বাস্থ্য খাত অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। মহামারীর সময়ই স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দুরবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছিল। কিন্তু এরপরও বাজেটে এই খাত প্রত্যাশিত মনোযোগ পাচ্ছে না। টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও বাজেট ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বরাদ্দ খুব একটা বাড়ছে না। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করে, যা বৈশ্বিক গড় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে অনেক কম। সবার জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের সক্ষমতা তৈরির ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে একজন বাংলাদেশির বছরে ৮৮ ডলার খরচ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে মাথাপিছু খরচ হয় ৫৮ ডলার, যার বড় অংশই নাগরিকরা নিজেরা সংস্থান করেন। বাংলাদেশের জনগণ তাদের স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ নিজেরাই সংস্থান করতে বাধ্য হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি অনেক পরিবারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক সঙ্কট এবং এটি মানুষের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবাকে বিলম্বিত করে। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশের নাগরিকরা তাদের স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৭০ ভাগ নিজেকে ব্যয় করতে হয়।’ এসডিজি অ্যাকশন অ্যালায়েন্স ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় অভিগম্যতা, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণের হার এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে নোয়াখালী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশালের ৬০০ নাগরিকের ওপর মতামত জরিপ পরিচালনা করে।
এতে দেখা গেছে ৭৮.৭ শতাংশ মানুষ কমপক্ষে একটি ডোজ পেয়েছেন, ২১.৩ শতাংশ কোনো টিকা নেননি। প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার জন্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রান্তিক মানুষের অভিগম্যতার হার ৭০.৫ শতাংশ। কিন্তু অনেক প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছিল। সমীক্ষায় দেখা যায়, ৪৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা খরচ মেটাতে কোনো না কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্পর্কে প্রান্তিক মানুষের সচেতনতার হার ভালো ৮৩ শতাংশ থাকা সত্বেও দুর্নীতি, স্বজনতোষন, হয়রানির কারণে বিপদাপন্ন মানুষের তালিকায় নাম লেখাতে পারেননি।
লিখিত বক্তব্যে বেসরকারি সংস্থা বন্ধনের নির্বাহী পরিচালক আমিনুজ্জামান মিলন ৫ দফা সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবায় অভিগম্যতা সম্প্রসারণে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো অপরিহার্য। স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচির আওতা প্রসারিত করে এবং স্বাস্থ্যসেবা খরচের জন্য ভর্তুকি প্রদান করে স্বাস্থ্যের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যয় কমানো যায়। সরকার আরও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা তৈরি করে, আরও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ ও পরিষেবাগুলোকে আরও সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারে। সরকার সকল নাগরিকের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য শিক্ষা, কৃষি, এবং পানি ও স্যানিটেশনের মতো অন্যান্য সেক্টরের সঙ্গে কাজ করে স্বাস্থ্যের সামাজিক নির্ধারকগুলোর সমাধান করতে পারে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত নারী অধিকার জোটের সদস্য সচিব মনোয়ার আক্তার মিনু।