বন্দর ও বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামের ঐতিহ্য আবহমানকালের। পরাধীন ভারতের হরেক রকম আন্দোলন-সংগ্রামেরও সরাসরি অংশীদার চট্টগ্রাম। স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিস্মরণীয় অধ্যায়েও বীর চট্টলার ভূমিকা ইতিহাসের গৌরবময় পর্যায়। দেশের প্রধান বাণিজ্য নগরীর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছে নতুন একটি মাত্রা। স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেলের বাস্তবায়ন। বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ার লক্ষ্যে যে মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে তা এখন বাস্তবায়নের গন্তব্যে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ করার যে অবিস্মরণীয় কর্মযোগ সেটার উদ্বোধন এখন সময়ের অপেক্ষায়। দুনিয়াজুড়ে যা পরিচিতি পাবে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নামে। বৃহদাকারের এই উন্নয়ন প্রকল্পের ৭০ শতাংশ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশও অচিরেই শেষ করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রথম টিউব তার গন্তব্যে পৌঁছলে দ্বিতীয় টিউবও তার কার্যক্রমে এগিয়ে যাওয়ার দৃশ্য উন্মোচিত হচ্ছে, যার ৭৫% নির্মাণ কাজ প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলের মধ্যে এই টানেলই হবে সর্ব প্রথম।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বোরিং প্রক্রিয়াসহ অন্য সব গুরুত্বপূর্ণ প্রবাহ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তার লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। মাঝপথে গত প্রায় ২ বছর ধরে যে করোনার মহাসঙ্কট তাতে অনেক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ প্রতিবন্ধকতার শিকার হলেও এখানে তা হয়নি। নির্মাণ কাজের বিশেষ কারিগরি উপকরণ ১৯ হাজার ৬১৬টি সেগমেন্ট চীন থেকে ইতোমধ্যে আমদানিও করা হয়েছে। শেষ চালানে ৮০০ সেগমেন্ট বোঝাই চীনা পতাকাবাহী জাহাজ বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পৌঁছলে তা খালাসের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। আগে আসা সেগমেন্টগুলো ইতোমধ্যে প্রতিস্থাপন করার কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়েছে। ৪ লেনের দুটি টিউব দিয়েই এই টানেল প্রস্তুতকরণের কর্মপ্রক্রিয়া বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ২৪৫০ মিটার দূরত্বের প্রথম টিউবটি তার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছলে দ্বিতীয় টিউবটির কর্মপ্রবাহ শুরু করা হয়। দ্বিতীয় টিউবের ২৪৫০ মিটারের মধ্যে ১৮০০ মিটার তৈরি হওয়ার চিত্রও পূরণের পথে।
চীনা প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে দেশীয় নির্মাণ শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের এত বড় কর্মযজ্ঞ তার যথার্থ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী প্রথম টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করলে এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের যাত্রাপথ শুরু হয়। এই টানেলের কারিগরি সার্বিক উপকরণ তৈরি করা হচ্ছে চীনের জিং জিয়ান প্রদেশে। স্বপ্নের এই টানেল তা হলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এক অনন্য মাত্রায় নিজেকে উদযাপন করবে।