সৌরবাতি প্রকল্প

12

দেশে অনেকভাবেই রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়। অপচয়ের তালিকায় নতুন যোগ হয়েছে সৌরবাতি। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের বিভিন্ন উপজেলা বা পৌরসভায় এসব বাতি লাগানো হয়েছিল। বাতি স্থাপনের কয়েক মাস পর থেকেই সেগুলো নষ্ট হতে থাকে।
পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কে স্থাপিত সৌরবাতিগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বলছে, পুরনো বাতিগুলোর মেয়াদ তিন বছর পার হয়ে যাওয়ায় সেগুলো ঠিক করা সম্ভব নয়। এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্থাপিত ২৭৪টি বাতির অনেকটিই নষ্ট হয়ে গেছে। চুক্তির মেয়াদ থাকার পরও সেগুলো ঠিক করা হচ্ছে না। ফলে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ গেলেও তা এলাকাবাসীর বলা যায় কোনো উপকারেই আসছে না।
শুধু ঈশ্বরদী থেকেই নয়, এর আগেও গণমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে একই ধরনের খবর এসেছে। মাদারীপুরের রাজৈর পৌর শহরে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫১৭টি স্থানে সড়কের ওপর সৌরবাতি স্থাপন করা হয়েছিল। প্রকল্পের অর্থায়ন করা হয়েছিল সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, স্থাপনের কয়েক মাস পর থেকেই বাতিগুলো নষ্ট হতে থাকে। তারা কাউকে কখনো বাতিগুলোর যত্ন নিতে কিংবা মেরামত করতে দেখেনি। পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব বাতির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য প্রশিক্ষিত জনবল তাদের কাছে নেই, বরাদ্দও নেই। ঈশ্বরদী পৌরসভা এবং সাতটি ইউনিয়নে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৬৯টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৬৮টি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৯৯টি ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৭৪টি সড়কবাতি স্থাপন করা হয়। এতে মোট ব্যয় হয় প্রায় ১১ কোটি টাকা। অকেজো পড়ে থাকায় সৌরবাতিগুলোর প্যানেল, এমনকি খুঁটিও চুরি হয়ে যাচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) টিএমএসএস বলছে, বাতিগুলোর ওয়ারেন্টি ছিল তিন বছর। বেশির ভাগ বাতির বয়স তিন বছর পেরিয়ে গেছে। জানা যায়, চুক্তির মেয়াদের পর সৌরবাতিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে কোনো বরাদ্দ না থাকায় এখন কিছুই করা যাচ্ছে না। তাহলে কোটি কোটি টাকার এই উদ্যোগ কি এভাবেই অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হবে?
দেশব্যাপী সৌরবাতি স্থাপনের বর্তমান উদ্যোগটি সেসব এলাকার মানুষের প্রশংসা পেয়েছিল। সেই প্রশংসার স্থলে এখন হতাশা প্রকাশ পাচ্ছে। প্রকল্পটি নেওয়ার আগেই দীর্ঘ মেয়াদে এর রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি ভাবা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তা না করায় কোটি কোটি টাকা গচ্চা যেতে বসেছে। আমরা চাই দ্রুত সৌর সড়কবাতিগুলো সচল করা হোক এবং রক্ষণাবেক্ষণে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক।