হবিগঞ্জে সরকারের দেয়া ঘর পেলেও বিদ্যুৎ পানি ও যাতায়াত নিয়ে সমস্যা

12

ছনি চৌধুরী হবিগঞ্জ থেকে :
মুজিববর্ষে হতদরিদ্র, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক উদ্যোগ থমকে গেছে হবিগঞ্জে। সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে বিদ্যুৎ, পানি ও যাতায়াত নিয়ে নানা সমস্যাই এর জন্য দায়ী। প্রভাবশালীদের দাপটেও অনেক স্থানে নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তদারকির অভাবে নষ্ট হচ্ছে ঘর নির্মাণে ব্যবহৃত কাঠসহ বিভিন্ন সামগ্রী।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে হবিগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৪৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে ৩৩৫টি ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরমধ্যে নবীগঞ্জ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১১০টির মধ্যে অধিকাংশ ঘরের কাজ প্রায় শেষ।
দ্বিতীয় ধাপে ৪০টি গৃহনির্মাণের বরাদ্দ আসে। যার কাজ চলছে। পরে আরও ২০টি ঘর বরাদ্দ হলেও অর্থ না আসায় কাজ শুরু হয়নি। প্রথম ধাপে ১১০টি ঘরের মধ্যে জেলা প্রশাসক পর্যায়ক্রমে ৮৭টি নির্মিত ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর করেন।
প্রথম ধাপের বরাদ্দের অংশ হিসেবে ইনাতগঞ্জ বাজার সংলগ্ন দীঘিরপাড় এলাকায় সরকারের খাস খতিয়ানের ২২.৭১ শতক ভূমির মধ্যে ৮ জন ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ১৬ শতক ভূমি বন্দোবস্ত দিয়ে ৮টি গৃহ নির্মাণ শুরু হয়। তখন আহমদ আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তি তার নামে ভূমি বন্দোবস্ত দাবি করে নির্মাণকাজে বাধা দেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মুমিন তাকে একাধিকবার নোটিশ দিলেও তিনি কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন।
২৩ জানুয়ারি প্রথম ধাপের ১১০টির মধ্যে ২৫টি ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয় উপকারভোগীদের। যার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে পর্যায়ক্রমে প্রথম ধাপের ৮৭টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু কাজ শেষ পর্যায়ে এলেও ২০ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সহকারী জজ আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশে ইনাগঞ্জের ৮টি ঘরের শেষ পর্যায়ের কাজ আটকা পড়ে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ওই পরিবারগুলোর ঘরে ওঠা।
এ ব্যাপারে আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করে বলেন, ‘যা বলার আদালতে বলবো।’
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. মহিউদ্দিন বলেন, আবুল কালাম আজাদের বৈধ কাগজ নেই। এই ভূমি প্রকৃত অর্থে সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত। যার এসএ এবং আরএস বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড রয়েছে।
১০৪টি ঘরে তালা
এদিকে জেলার চুনারুঘাট ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ, সুপেয় পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ও যাতায়াত সমস্যার কারণে ১০৪টি ঘরে ঝুলছে তালা।
চুনারুঘাট উপজেলার ইকরতলীতে ৭৪টি ভূমিহীন পরিবারকে গত ২৩ জানুয়ারি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে ঘরে উঠতে অনীহা প্রকাশ করেছেন উপকারভোগীরা। ৭৪টি ঘরের মধ্যে মাত্র ২১টিতে মানুষ বসবাস করছেন। বাকি ৫৩টি ঘরে ঝুলছে তালা।
বসবাসকারীদের অভিযোগ, ওই এলাকায় কাজের সুযোগ নেই। যাতায়াতের ব্যবস্থাও নাজুক। তিন মাসেও দেওয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। এছাড়া ৭৪টি পরিবারের জন্য রয়েছে মাত্র চারটি টিউবওয়েল।
ইকরতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, ‘এখানে পানির খুব সমস্যা। আমরা এখানে ২১টি পরিবার থাকি। টিউবওয়েলের চারপাশ খোলামেলা। গোসল করতে গেলে নারীদের সমস্যা হয়। এত মানুষের গোসল, থালা-বাসন ধোয়া সবই টিউবওয়েলে করতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে জমি নেই, বিদ্যুৎ নেই, রাস্তাঘাট ভালো না, মানুষের যাতায়াত নেই। কাজও নেই। আমার স্বামী অনেক দূরে গিয়ে যা কাজ পায় তা-ই করে। অনেক কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। এভাবে বেশি দিন থাকা সম্ভব না।’
এ প্রসঙ্গে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সত্যজিৎ রায় দাশ বলেন, ‘এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগের বরাদ্দ নেই। আমাদের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কোনও টাকা চাওয়া হয়নি। যারা ঘর পেয়েছেন কিন্তু এখনও আসেননি তাদের আসার জন্য বলা হচ্ছে। এরপরও যদি তারা না আসেন তবে বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।’
একই চিত্র আজমিরীগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলায় ৮৮টি ঘর বানানো হলেও হস্তান্তর হয়েছে ৭০টি। এরমধ্যে কাকাইলছেও এলাকায় বানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ৫১টি ঘর। এসব ঘরের চাবি হস্তান্তর হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ, সুপেয় পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধা নেই। তাই ওঠেনি একটি পরিবারও।
৫১টি পরিবারের জন্য নেই নলকূপ ও বিদ্যুৎ সংযোগ। বর্ষাকালে পানি ওঠারও আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এসব কারণে কুশিয়ারা নদীর তীরঘেঁষা আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ৫১টি ঘরে ঝুলছে তালা।