দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিলে প্রাপ্ত ভেরিয়েন্টসহ করোনাভাইরাসের অনেক ভেরিয়েন্টই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ সেগুলো যথেষ্ট সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছে। এবার ভয়ংকর ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই ভেরিয়েন্টের সংক্রমণক্ষমতা সাধারণ ভাইরাসের তুলনায় ৩০০ গুণ বেশি। মৃত্যুর হারও অনেক বেশি। নতুন এই ভেরিয়েন্টের কারণে ভারতের এখন বেসামাল অবস্থা। ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের মাধ্যমে বাংলাদেশেও এরই মধ্যে এই ভেরিয়েন্টের কিছু অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অনুপ্রবেশ যাতে ব্যাপক না হয় সে জন্য সরকার সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ফলে চিকিৎসাসহ নানা কারণে ভারতে যাওয়া বাংলাদেশিদের ফেরার আগে সেখানে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর ফেরার পর সীমান্ত এলাকার আবাসিক হোটেলে আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। কিন্তু সময়মতো এনওসি না পাওয়ায় অনেকে আটকা পড়েছে সীমান্তের ওপারে। সবচেয়ে বেশি মানুষ আটকা পড়েছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্তে। তাদের নানা ধরনের ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে। আবার ভারতে কঠোর লকডাউন আরোপ করায়ও অনেকের ফিরতে অসুবিধা হচ্ছে।
চিকিৎসাসেবাসহ অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের সক্ষমতা বেশি। তা সত্ত্বেও ভারত পরিস্থিতি মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। তেমন পরিস্থিতি যাতে বাংলাদেশে না হয় সে জন্যই আমাদের চেষ্টা করতে হবে। সে কাজে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বহু মানুষের মধ্যেই সে রকম সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে, যেটি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ঈদে বাড়ি যাওয়া এবং ঈদের পর ফিরে আসার ক্ষেত্রে। এখন যা করার সরকারকেই করতে হবে। ভারতে যারা আটকা পড়েছে, তাদের সুশৃঙ্খলভাবে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। চোরাপথে কেউ যাতে সীমান্তের ওপারে যেতে বা আসতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। আবার যারা দেশে ফিরে আসবে, তাদের কোয়ারেন্টিন যেন যথাযথ হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। ফিরে আসা ব্যক্তিদেরও এ ব্যাপারে প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।
আমরা আশা করি, ভাইরাসের অন্যান্য ভেরিয়েন্ট মোকাবেলায় বাংলাদেশ যে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে, ভারতীয় ভেরিয়েন্ট মোকাবেলায়ও একই ধরনের সাফল্য দেখাবে। এ জন্য ভেরিয়েন্টের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা আরো উন্নত ও জোরদার করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব টিকার ব্যাপক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।