দিরাইয়ে বাঁধের কাজের বেহাল দশা, ক্লোজারের কাজ শুরু হয়েছে মাত্র

25
দিরাইয়ে এভাবেই চলছে বাঁধের কাজ।

একে কুদরত পাশা সুনামগঞ্জ থেকে :
দিরাই উপজেলা সর্বদলীয় সম্প্রীতি উদ্যোগ (পিএফজি)’র উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন হাওরের বাঁধ পরিদর্শন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বাঁধ পরিদর্শন শেষে উপজেলার ধল বাজারে কৃষক সমাবেশ করা হয়।
দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজ দ্দৌলা, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাপ মিয়া, উপজেলা মহলিা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রিপা সিনহা, দিরাই প্রেসক্লাব সভাপতি ও হাওর বাঁচাও আন্দোলন দিরাই উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামছুল ইসলাম সরদার খেজুর, দিরাই প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক ও হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশার নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল হাওর পরিদর্শনে যায়। তারা হাওরের বিভিন্ন বাঁধে কাজা শুরু না হওয়ায় এবং যে সব বাঁধে কাজ শুরু হয়েছে তা দায়সারভাবে কাজ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
যে বাঁধগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে সে বাঁধগুলো নভেম্বর মাসেও অক্ষত ছিল। বাঁধের কাজের পরিমান ও টাকার পরিমান আকাশ-কুশুম বলে মনে করেন পরিদর্শন দল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন, ধনীর রায়, সেলিম মিয়া, সুলতানা রাজিয়া, দিপালী দে, পারভিন বেগম, জলি রানী, মাজেদা বেগম, আমিরুন্নেছা, ইমন মিয়া, চাদমালা বিবি প্রমুখ।
প্রতিনিধি দল সকালে দিরাই উপজেলার সবচেয়ে বিপদজনক ও উপজেলা সদরের কাছের পিআইসি নং-৮৬ বরাম হাওর উপ-প্রকল্প ডুবন্ত বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরণ ও মেরামত কাজ দেখতে যান, সে প্রকল্পে সভাপতি হচ্ছেনমুজিবুর রহামন ও সদস্য সচিব আব্দুল হিকিম। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্লোজারে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। তবে পিআইসির কোন লোক পাওয়া যায়নি। পরের কাজ পরে করে সেখানে গিয়ে তার আলামত পাওয়া যায়, মাটির বড়বড় চাকা পেলা হচ্ছে ক্লোজারে। দুইজন শ্রমিক পাশেই বাঁশের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সব মিলিয়ে ১০ ভাগ মাটির কাজ হয়েছে সেখানে। কোন অবস্থাতেই সঠিক সময়ে কাজ শেষ করার আলামত দেখা যায়নি।
পিআইসি নং ১৩ চাপতির হাওর উপ-প্রকল্প বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরণ ও মেরামত কাজ সেখানে গিয়ে দেখা যায় নামকা ওয়াস্তে কিছু মাটি ফেলা হচ্ছে বাঁধে। এ প্রকল্পে সভাপতি হচ্ছেন আবু তাহের ও সদস্য সচিব সাদ্দাম হোসেন। এ প্রকল্পের বরাদ্দ ২০ লক্ষ ৮৯ হাজার ৩শ ৬৬ টাকা। ১৪ নং পিআইসি চাপতির হাওর উপ-প্রকল্প বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরণ ও মেরামত এ প্রকল্পে সভাপতি হচ্ছেন নজরুল ইসলাম ও সদস্য সচিব জতি দাস। এ প্রকল্পের বরাদ্দ ২৩ লক্ষ ৩ হাজার ৬শ ৪১ টাকা। প্রকল্প এলাকায় কোন সাইনবোর্ড নেই। নেই পিআইসির লোকজন। এখানেও ক্লোজার বন্ধ হয়নি। ১৫ নং পিআইসি চাপতির হাওর উপ-প্রকল্প বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরণ ও মেরামত এ প্রকল্পে সভাপতি হচ্ছেন আফজল হোসেন ও সদস্য সচিব শওকত মিয়া। এ প্রকল্পের বরাদ্দ ১৩ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭শ ২৪ টাকা। এ প্রকল্পে এখনো কাজ শুরু হয়নি। ১৬ নং পিআইসি চাপতির হাওর উপ-প্রকল্প বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরণ ও মেরামত এ প্রকল্পে সভাপতি হচ্ছেন আব্দুর রকিব চৌধুরী ও সদস্য সচিব লোভন চৌধুরী। এ প্রকল্পের বরাদ্দ ১৩ লক্ষ ১ হাজার ৪শ ৪২ টাকা। প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাটির কাজ শেষ করা হয়েছে স্লোপও দেওয়া হয়েছে, তবে মাটি দুরমুজ করা হয়নি, কিছু কিছু জায়গায় মাটির নিচের ঘাস বের হয়ে আসছে। নিয়মমতো কাজ হয়েছে কি না তা পাউবোকে নিশ্চিত করতে হবে। ১৭ নং পিআইসি চাপতির হাওর উপ-প্রকল্প বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরণ ও মেরামত এ প্রকল্পে সভাপতি হচ্ছেন হোসেন চৌধুরী ও সদস্য সচিব কাশেম মিয়া। এ প্রকল্পের বরাদ্দ ২৪ লক্ষ ৯৮ হাজার ৫শ ৭৫ টাকা। ক্লোজারের পাশে গত বছরের বাঁশ অক্ষত রয়েছে। বাঁধটিও অক্ষত ক্লোজারটি গত বছরে ভাঙ্গেনি তবে বাজেট এত বেশি কেন এর কোন হিসেব পাচ্ছেন না প্রতিনিধি দল। বাঁশের পাশে কিছু বস্তায় মাটি ভরে রাখা হয়েছে। তবে কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে এখানে শুভংকরের ফাঁকি থাকতে পারে।
৯৫ নং পিআইসি বরাম হাওর উপ-প্রকল্প বাঁধের ভাঙ্গা বন্ধকরণ ও মেরামত এ প্রকল্পে সভাপতি হচ্ছেন আবুল হোসেন ও সদস্য সচিব উজির মিয়া। এ প্রকল্পের বরাদ্দ ১৮ লক্ষ ৫ হাজার ৭শ ৩৫ টাকা। প্রকল্প এলাকায় পিআইসির লোকজন পওয়া যায়নি। এখানেও ক্লোজার বন্ধ হয়নি। এ ক্লোজার দিয়ে ১৭ সালে পানি প্রবেশ করে। যে ভাবে কাজ চলছে তাতে হাওরের কৃষকরা দুচিন্তায় রয়েছেন। কোন অবস্থাতেই সময়মত কাজ শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ মুহূর্তে বৃষ্টি নামলে সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিনিধি দলকে জানান, প্রশাসনের লোকরা অপেক্ষায় আছেন বৃষ্টি নামার বৃষ্টি নামলেই এসব ক্লোজারের তারা আরো বাজেট আনার জন্য।
বিকেলে ধলবাজার হাইস্কুল মাঠে দিরাই পিএফজির উদ্যোগে আয়োজন করা হয় কৃষক সমাবেশের। সিরাজ দৌলার সভাপতিত্বে ও সামছুল ইসলাম সরদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আব্দুর রশিদ চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট রিপা সিনহা, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাপ মিয়া, দিরাই উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আলী আহমদ, কৃষক জালাল মিয়া, আব্দু শহীদ, রুপন মিয়া, রশিদ মিয়া প্রমুখ। সমাবেশ থেকে ঘোষণা তরা হয় আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি আবারোও বাঁধ পরিদর্শন করা হবে। এ সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ না হলে কৃষকদের নিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
পরে প্রতিনিধি দল বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের বাড়ীতে যান। সেখানে শাহ আব্দুল কমির যাদুঘর ঘুরে দেখেন।