স্টাফ রিপোর্টার :
ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ান, শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমান -এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আগামী ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন। সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও একই সময়ে এ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে। করোনাভাইরাস থাকায় টানা এবার ১৪ দিন চলবে ক্যাম্পেইনটি শেষ হবে ১৭ অক্টোবর। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সভাকক্ষে এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক ওরিয়েন্টেশনে এ তথ্য জানানো হয়।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপন করা হবে জানিয়ে ওরিয়েন্টেশনে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের প্রায় ৬১ হাজার ৪১৭ জন শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো হবে। এর মধ্যে ৬-১১ মাস বয়সী ৬ হাজার ৩১০ জন শিশুকে একটি করে নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (১ লাখ আইইউ মাত্রা) এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী প্রায় ৫৫ হাজার ১০৭ জন শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (২ লাখ আইইউ মাত্রা) খাওয়ানো হবে। সিলেটে ২৪৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৪৯৪ জন স্বেচ্ছাসেবী এ কর্মযজ্ঞে অংশ নিবে।
ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারী সকল শিশুর সুরক্ষার বিষয়ে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। কেন্দ্রে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে বলেও উপস্থিত সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করা হয়।
জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন ২০২০ উপলক্ষে সিসিক কর্তৃক সরবরাহকৃত মাইক্রোপ্ল্যানে দেখা গেছে সিসিকের ১ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে ৪ অক্টোবর। ৬ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ অক্টোবর, ৯ থেকে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ অক্টোবর, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৭ অক্টোবর, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৮ অক্টোবর, ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১১ অক্টোবর, ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১২ অক্টোবর, ২০,২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩ অক্টোবর, ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১৪ অক্টোবর এবং ২৫,২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫ অক্টোবর শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানো হবে।
ওরিয়েন্টেশনে সিসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থাপিত কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সময় মতো উপস্থিত হয়ে শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর জন্য নগরবাসীকে আহবান জানানো হয়। পাশাপাশি অসুস্থ ও করোনা উপসর্গ নিয়ে কেন্দ্রে আসার ব্যাপারেও নিরুৎসাহিত করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্র সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ পর্যন্ত ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর থেকে একটি শিশুও যেন বাদ না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতেও সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। তবে কেউ বাদ পড়লেও তাদেরকে পরবর্তী সময়ে টিকা খাওয়ানো হবে বলেও জানান সিসিকের প্রধান নির্বাহী।
জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলে শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ, দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়। এ ক্যাম্পেইন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হবার কারণে রাতকানা রোগের হার শতকরা ১ ভাগের নিচে রয়েছে। এছাড়া সকল ধরনের মৃত্যুর হার ২৪ শতাংশ, হামজনিত মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ এবং ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুহার ৩০ শতাংশ নেমে এসেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
ক্যাম্পেইনে আন্তঃব্যক্তি যোগাযোগ ও গণমাধ্যমের সহায়তায় জন্মের পরপরই (১ ঘণ্টার মধ্যে) শিশুকে শালদুধ খাওয়ানোসহ প্রথম ৬ মাস শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো এবং শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি পরিমাণ মতো সুষম খাবার খাওয়ানো বিষয়ে প্রচারাভিযান চালানো হবে।
ওরিয়েন্টেশনের শুরুতে প্রজেক্টরে স্লাইড শো প্রদর্শনের মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনুসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।