স্টাফ রিপোর্টার :
পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিকরূপে গড়ে তুলা হচ্ছে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর। এ উপলক্ষে ২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক স্থাপত্যশৈলী ও প্রযুক্তি বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প ও নতুন টার্মিনালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশাল এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনগুণেরও বেশি এরিয়া নিয়ে তৈরি হচ্ছে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্পূর্ণ এই নতুন টার্মিনাল। এর মাধ্যমে বছরে ২০ লক্ষ যাত্রীকে সেবা দেয়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিমানের সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালুরও আশ্বাস দিয়েছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে সিলেটে আসা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী।
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মধ্যেমে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বন্ধ হওয়া বিমানবন্দরগুলো চালু করেছে। পাশাপাশি বিমানের নিরাপদ সেবা নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিকরূপে গড়ে তুলা হচ্ছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের, যশোর বিমানবন্দরকে উন্নত করা এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক মানের করে গড়ে তোলা হবে। কেন না কক্সবাজারের মতো সি-বিচ বিশ্বের কোথাও নেই। ১২০ কিলোমিটার সি বিচ।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এমপির সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হকের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি। উপস্থিত ছিলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, সিলেট ২ আসনের এমপি মোকাব্বির হোসেন, সিলেটের সংরক্ষিত মহিলা এমপি শামিমা আক্তার, সাবেক এমপি জেবুন্নেছা হক ও আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মতিউর রহমান এনডিসি, সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আশফাক আহমদ প্রমুখ।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মিত হবে। উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরের ন্যায় সর্বাধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা থাকবে এ টার্মিনালসহ অন্যান্য স্থাপনায়।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে ৩৪ হাজার ৯১৯ বর্গমিটারের আধুনিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন। এ টার্মিনালে আটটি বিমান একসঙ্গে যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারবে। এর বাইরে ৬ হাজার ৮৯২ বর্গমিটারের কার্গো ভবন, ২ হাজার ৪১৫ বর্গমিটারের ফায়ার স্টেশন, ২ হাজার ৭৭২ বর্গমিটারের কন্ট্রোল টাওয়ার, ১ হাজার ৩৯৫ বর্গমিটারের প্রশাসনিক ভবন, ৬০৬ বর্গমিটারের মেইনটেন্যান্স ভবন, ২ হাজার ৫২৪ বর্গমিটারের ইউটিলিটি ভবন এবং ৯ হাজার ২৯৯ বর্গমিটারের মধ্যে আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, বিদ্যমান সুবিধাসহ আরো সুপরিসর ৬টি উড়োজাহাজ পার্কিং উপযোগী ৭১ হাজার ৭৪৩ বর্গমিটার এপ্রোন নির্মাণ, এপ্রোনের সংযোগকারী টেক্সিওয়ে, বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রসহ ফুয়েল ডিস্ট্রিবিউশন এন্ড হাইড্রেন্ট সিস্টেমসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো ও স্থাপনাদি নির্মিত হবে। এছাড়া বিদ্যমান প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে যে এরিয়া রয়েছে তার তিনগুণেরও বেশি এরিয়া নিয়ে তৈরি হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন টার্মিনাল। বিদ্যমান টার্মিনালে বছরে মোট ৬ লক্ষ যাত্রীকে সেবা দেয়া যায়। নতুন টার্মিনালের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে (২০৪০ সাল পর্যন্ত) বছরে ২০ লক্ষ যাত্রীকে সেবা দেয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভবনের স্থাপত্য নকশা যৌথভাবে করছে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ইওসিন ও হেরিম। যারা বিশ্বের বহু এয়ারপোর্টের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনের স্থাপত্য নির্মাণ করেছে। নতুন টার্মিনাল ভবনের কাজ শেষ হলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ তথা সিলেটের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।
অনুষ্ঠান শেষে প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুব আলী সাংবাদিকদের জানান, ওসমানী বিমানবন্দরের সবধরণের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে সত্যিকারের পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করা হবে। আধুনিক ওসমানী বিমানবন্দর হবে সিলেটবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। প্রতিমন্ত্রী জানান, আগামী দু’চারদিনের মধ্যে সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ওসমানী বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার দাবি সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের। সেই দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ওসমানী বিমানবন্দরের উন্নয়নে হাত দিয়েছেন। এখন যে টার্মিনাল ভবন আছে তার তিনগুণ বড় হবে নতুন টার্মিনাল ভবন। এতে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে যাত্রীরা বিশে^র বিভিন্ন দেশে যেতে পারবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, এমসি কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অপরাধীরা ছাড় পাবে না।