তোফাজ্জল হোসেন নবীগঞ্জ থেকে :
প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ছেলের নামাজে জানাযায় অংশ নিলেন পিতা মুবাশ্বির মিয়া। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বিকাল ৪টায় থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চার ঘন্টার জন্য তাকে হবিগঞ্জ কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। মুবাশ্বির মিয়ার পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রতিপক্ষের হামলায় আহত মুবাশ্বির মিয়ার ছেলে জুবায়েল আহমেদ মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মুবাশ্বির মিয়ার বড় ছেলে জানান, প্রতিপক্ষ ঘাতকদের নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ভাইয়ের মৃত্যুতে তাদের বাবার প্যারোলে মুক্তি চেয়ে আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুবাশ্বির মিয়া মুক্তি পেয়ে গ্রামের বাড়িতে যান এবং জানাযায় অংশগ্রহণ করেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় নামাজে জানাযা শুরুর পূর্বে নিহত কিশোর জুবায়েল এর প্যারোলে মুক্তি পাওয়া পিতা মুবাশ্বির মিয়া জানাযায় অংশ গ্রহণকারী গ্রাম, এলাকা ও উপস্থিত পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষ ঘাতকরা তাদের লোকজনের উপর হামলা ও পুত্র জুবায়েলকে কিভাবে নির্যাতন করা হয়েছে এবং তাকে ও তার ভাইসহ বিনা অপরাধে মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করে গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মাজহারুল ইসলাম কর্তৃক প্রতিপক্ষের ইন্ধনে শারীরিকভাবে নির্যাতনের কথা কান্না জড়িত কন্ঠে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমার ভাই ভাতিজা ও ছেলেদের প্রভাবশালীরা দল বেঁধে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে আহত করে। তিনি আহাজারি করতে করতে বলেন, ঘাতকের নির্যাতনে ঘটনাস্থলেই জুবায়েল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে তিনি সরকারের নিকট ছেলে হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি এবং তিনি সহ অন্যান্য ৪ জন নিরীহ লোককে গ্রেফতার এবং পুলিশ কর্তৃৃক নির্মম নির্যাতনের বিচার দাবী করেন।
এছাড়াও ফুটারচর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাযার নামাজের পূর্বে নবীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ আজিজুর রহমান চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী ওবায়দুল কাদের হেলাল বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুল রহমান নিহত জুবায়েলের বাবা মুবাশ্বির মিয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এসময় তিনি সবাইকে শান্তির আহবান জানান। জানাযা শেষে ফের কারাগারে নেওয়া হয় মুবাশ্বির মিয়াকে। এদিকে, নিহত জুবায়েলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয় বিদারক দৃশ্য। নিহত জুুবায়েলের মা-বোনসহ স্বজনরা মাটিতে লুুটিয়ে পড়ে আর্তনাদ করতে দেখা যায়। নিহত জুবায়েলরা ৪ ভাই ও ১ বোন। ভাই-বোনদের মধ্যে সে ছিল ৩য়।
উল্লেখ্য যে, উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের ঝিটকা গ্রামের মসুদ মিয়া গ্রামের পঞ্চায়েতী কবরস্থানের পাশ ঘেঁষে এবং কবরস্থানের কিছু জায়গা ভেদ করে তার বীজতলায় বেড়া দিলে একই গ্রামের মশাহিদ মিয়া গংরা সহ গ্রামের লোকজনের কবরস্থান সহ সর্বক্ষেত্রে যাতায়াত ও চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে বলে বাধা প্রদান করলে মসুদ ও জবেদ গংরা দলবলে মিলিত হয়ে মুবাশ্বির ও মশাহিদ গংদের উপর হামলা চালায়। এ সময় গ্রামের কিছু লোকজনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরবর্তীতে মশাহিদ মিয়া ও মুবাশ্বির মিয়ারা গ্রামের পঞ্চায়েত পক্ষকে বিষয়টি অবগত করলেও পঞ্চায়েতের কোন সুরাহা করতে পারেনি। এরই জের ধরে গত শুক্রবার (৩ জুলাই) স্থানীয় গোপলার বাজার স্ট্যান্ডে মশাহিদ মিয়া ও মসুদ মিয়ার লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হামলা পাল্টা হামলা হয়। এ সময় মশাহিদ মিয়ার পরে কিশোর জুবায়েল সহ প্রায় ৭ জন গুরুতর আহত সহ উভয় পক্ষে প্রায় ১০ জন আহত হয়। সংঘর্ষস্থলে আহত জুবায়েল জ্ঞান হারিয়ে পরে থাকলে তাকে সহ মারাত্মক আহতদের সেখান থেকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০ টায় তিনি মারা যান। পরদিন সেখানে পোস্টমর্টেম ও সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর নবীগঞ্জ থানায় লাশ নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে বিকেল ৪টায় জুবায়েলের লাশ নিজ বাড়ীতে নিয়ে আসলে নবীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ আজিজুর রহমান, ইউ/পি চেয়ারম্যান আব্দুল মোহিত চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী ওবায়দুল কাদের হেলাল, হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি দেওয়ান শাহেদ গাজী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফজলুল করিম সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হয়ে পরিবারের লোকজনকে সান্ত্বনা দেন। এদিকে বুধবার সন্ধা ৬ টায় ফুটারচর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাযার সময় নির্ধারিত থাকলেও নিহত জুবায়েলের পরিবার এবং গ্রামবাসী জানাযা এবং দাফনকার্য স্থগিত রেখে লাশসহ মিছিল সহকারে গোপলা বাজার ষ্ট্যান্ডে যেতে চাইলে নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে লাশ বাড়িতে রেখে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধা সাতটা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ জনতা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে এবং জুবায়েল হত্যাকারীদের গ্রেফতার সহ ফাঁসি দাবী করে এবং জুবায়েলের পিতা সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং এসআই মাজহারুল এর বিচার দাবি করা হয়। পরবর্তীতে এস,পি হবিগঞ্জ এর ফোনে জুবায়েল হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অবরোধ প্রত্যাহার করলেও বিক্ষুব্ধ জনতা জুবায়েলের পিতাসহ জেলহাজতে বন্দি ৪ জনের মুক্তি ব্যতিরেকে লাশ দাফনে অস্বীকৃতি জানিয়ে লাশ দাফন কার্যক্রম স্থগিত রাখে। পরবর্তীতে জুবায়েলের পিতা কে প্যারোলে মুক্ত করে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮ টায় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে রাত ১২ টায় নিহতের চাচা বাদী হয়ে ১৮ জনকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।