সারা দেশে যেভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে, তা অবশ্যই চিন্তার কারণ। তার জন্য যথাযথ সতর্কতা ও সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কিন্তুডেঙ্গু নিয়ে যেভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তার পেছনে কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। অনেক ক্ষেত্রেই তা লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি করছে। গত বুধবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪৬৫ জন রক্ত পরীক্ষা করিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৬ জনের ডেঙ্গু পজিটিভ পাওয়া গেছে। এভাবে আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত সংখ্যায় মানুষ হাসপাতালে ভিড় জমালে হাসপাতালের স্বাভাবিক সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। প্রকৃত ডেঙ্গু রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা গেলেই শুধু চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ভালো।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি হতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই সতর্ক করেছিল। আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও অনুরূপ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। তার পরও আমাদের সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কর্মসূচি চলছিল ঢিমেতালে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যাপকভাবে মশা নিধন কর্মসূচি চালানো হলে অবস্থা হয়তো এতটা খারাপ হতো না। আবার নাগরিক অসচেতনতাও এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। যখন মশার ওষুধ বা ফগার মেশিন চালানো হয়, তখন অনেক বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখা হয়। ঘরের ভেতরে ফ্রিজের পেছনে, ফুলের টব, ফুলদানি বা অন্যান্য পাত্রে কয়েক দিন ধরে পানি জমিয়ে রাখা হয় এবং মশা বংশবিস্তার করে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, অর্ধেকের বেশি মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা মশারি ব্যবহার করে না। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে। আইসক্রিমের কাপ, প্লাস্টিকের বোতল ও ব্যাগ, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার বা অন্যান্য পাত্র যেখানে-সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে ও তাতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। নির্মাণাধীন বাড়িতে জমানো পানিতেও এডিসের বংশবিস্তার দ্রুত হয়। এসব ক্ষেত্রে আমরা সচেতন না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ বছর শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ডেঙ্গুর পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। ফিলিপাইনে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে, মারা গেছে ৪৫০ জনেরও বেশি। মালয়েশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৭০ হাজারের বেশি। সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত হয়েছে আট হাজার এবং মারা গেছে ৯ জন। প্রায় একই চিত্র অন্যান্য দেশেও। জলবায়ু পরিবর্তনের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, বৃষ্টির পানি জমতে পারে এমন কিছু বাইরে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা, ঘরের মধ্যে মশার বংশবিস্তার রোধ করা, মশারি বা মশা নিবারক উপাদান ব্যবহার করা, ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ইত্যাদি কাজ আরো সচেতনভাবে করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক উদ্যোগ গড়ে তুলতে হবে। সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাকে আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে। সামনে আরো দু-তিন মাস অবস্থা এমনই থাকতে পারে, তাই হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গু মোকাবেলায় আরো বেশি প্রস্তুত রাখতে হবে।