ইতালিতে বাড়ছে জরুরী অবস্থার মেয়াদ

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কোভিড-১৯ রোগে ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক শনাক্ত হলো ৭১ হাজারের ওপর। করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ায় ইউরোপের দেশ ইতালিতে জরুরী অবস্থার মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন। লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৭০ হাজার। অন্যদিকে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), একদিনে বিশে^ সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, বিশ^ব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনায় শনিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে এক কোটি ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮২২ জন হয়েছে। মৃতের সংখ্যা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার ৫৯৮ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭৮ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৭ লাখ পাঁচ হাজার ৬৪৬ জন। যাদের মধ্যে ৫৮ হাজার ৭৩৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একদিনে সারাবিশে^ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৩৬ হাজার ৯১৮ জন। মারা গেছেন পাঁচ হাজার ৪১৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ৬১ হাজার ২৭৮ জন। ইউরোপে একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ১৩৬ জন। নতুন করে মারা গেছেন ৩৭৮ জন। উত্তর আমেরিকায় একদিনে আক্রান্ত ৮৩ হাজার ৭২০ জন। মারা গেছেন এক হাজার ৭০৭ জন। এশিয়ায় আক্রান্ত ৫৬ হাজার ৭৮৪ জন। মারা গেছেন এক হাজার ৯৭ জন। দক্ষিণ আমেরিকায় একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৩০৬ জন। মারা গেছেন এক হাজার ৯২৫ জন। আফ্রিকায় আক্রান্ত ১৭ হাজার ৬৬৫ জন। মারা গেছেন ৩০৯ জন। ভারতে আরও ৫৩০ মৃত্যু : ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা আট লাখ ২৩ হাজার ৯২৭ জন। এর মধ্যে কেবল শুক্রবার থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টাতেই শনাক্ত হয়েছে ২৯ হাজার ৮৫ জন। একদিনে ৫৩০ জনের মৃত্যু নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ২২ হাজার ১৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবারের আগে প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজারের মতো রোগী পাওয়া গেলেও এখন তা বেড়েছে। শনিবার সকালে কর্মকর্তারা সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৭ হাজার ১১৪ জনের দেহে প্রাণঘাতী ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানান। শনাক্ত রোগী আর মৃত্যুর সংখ্যায় ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে এখনও সবার ওপরে মহারাষ্ট্র। পশ্চিমাঞ্চলীয় এ রাজ্যে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৬১ জন, মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৮৯৩ জনের। রাজধানী দিল্লীতে আক্রান্ত এক লাখ ৯ হাজার ১৪০ এবং মৃত্যু তিন হাজার তিন শ’। তামিলনাড়ুতে আক্রান্ত এক লাখ ৩০ হাজার ২৬১ এবং মৃত্যু এক হাজার ৮২৯। গুজরাটে আক্রান্ত ৪০ হাজার ৩৮ এবং মৃত্যু দুই হাজার ২২। উত্তর প্রদেশে আক্রান্ত ৩৩ হাজার ৭০০ এবং মৃত্যু ৮৮৯। কর্ণাটকে ৩৩ হাজার ৪১৮ এবং মৃত্যু ৫৪৩। তেলেঙ্গানায় ৩২ হাজার ২২৪ ও মৃত্যু ৩৩৯। পশ্চিমবঙ্গে ২৭ হাজার ও মৃত্যু ৮৮০। অন্ধ্রপ্রদেশে ২৫ হাজার ৪২২ ও মৃত্যু ২৯২। হরিয়ানায় ১৯ হাজার ৯৫৬ ও মৃত্যু ২৯০। আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও সুস্থ হয়েছেন ৬২ শতাংশের বেশি মানুষ। একদিনে সুস্থ হয়েছেন ১৯ হাজার ৮৭৩। এ নিয়ে মোট পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৩৮৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড শনাক্ত : যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় নতুন রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার প্রথমবারের মতো দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের সংখ্যা ৭১ হাজার ৭৮৭ হয়েছে। দেশটির স্থানীয় সময় শুক্রবার প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮৪৯ জন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম দফা সংক্রমণের সময় ২৪ জুন দিনে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ৫৫৭ শনাক্ত হয়েছিলেন। ২৭ জুন ৪৫ হাজার ৯৪২ এবং মঙ্গলবার ৪৬ হাজার ৫০০ জন শনাক্ত হন। বৃহস্পতিবার ৬৫ হাজার মানুষের শরীরে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন যা ছিল ৬০ হাজার। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ লাখ ৯২ হাজার ২৫৭ জন। মারা গেছেন এক লাখ ৩৬ হাজা ৬৮২ জন। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস ও জর্জিয়া।
জরুরী অবস্থার মেয়াদ বাড়ছে ইতালিতে : করোনার বিস্তার বাড়তে থাকায় জরুরী অবস্থার মেয়াদ বাড়াতে যাচ্ছে ইতালি। ৩১ জুলাই দেশটিতে জরুরী অবস্থার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী গিসেপে কোন্তে জানিয়েছেন, তার দেশে জরুরী অবস্থার মেয়াদ বাড়তে পারে। গত বছরের জানুয়ারিতে ছয় মাসের জরুরী অবস্থা জারি করে ইতালি। ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনার প্রকোপ ধরা পড়ে। এর কিছুদিন পর ইতালিতে দুই চীনা পর্যটকের দেহে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়। সে কারণে জানুয়ারির শেষদিক থেকেই দেশব্যাপী জরুরী অবস্থা জারি করা হয়। তবে চলতি মাসে তা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এখনই জরুরী অবস্থা তুলে না নিয়ে সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে ইতালি সরকার। সম্প্রতি বাংলাদেশসহ ১৩ দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইতালি। গত সোমবার বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়া বিশেষ ফ্লাইটের ২১ যাত্রীর দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সে কারণে রোমের ফিউমিসিনো ও মিলানের মালপেনসা বিমানবন্দরে অবতরণ করা ১৮২ বাংলাদেশীর মধ্যে ১৬৭ জনকে সেখানে নামতে না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে ইতালি। বাংলাদেশের ফ্লাইটে করোনায় আক্রান্ত যাত্রী কিভাবে গেল তা নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে ইতালির সংবাদমাধ্যমে। বলা হচ্ছে, টাকার বিনিময়ে করোনা পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে ওই যাত্রীরা ইতালি গেছেন। গত দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ভ্রমণকারী বিদেশী নাগরিকদের জন্যেও প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে ইতালি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশসহ ১৩ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশেষ অর্ডিন্যান্সে স্বাক্ষর করেন ইতালীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্তো স্পেরাঞ্জা। ইতালির ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পড়া দেশগুলো- বাংলাদেশ, আর্মেনিয়া, বাহরাইন, ব্রাজিল, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, চিলি, কুয়েত, উত্তর মেসিডোনিয়া, মলদোভা, ওমান, পানামা, পেরু এবং ডমিনিকান রিপাবলিক।
একদিনে দুই লাখ ২৮ হাজার : করোনা সংক্রমণ রোধে জারি করা লকডাউন উঠে যাচ্ছে দেশে দেশে। রেকর্ড সংখ্যায় ভাইরাসটি সংক্রমণ ঘটিয়ে চলেছে মানুষের দেহে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, শুক্রবার নতুন করে বিশ্বজুড়ে একদিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ২৮ হাজার ১০২ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। চলতি মাসের শুরু থেকেই সংক্রমণে হঠাৎ দ্রুত উর্ধগতি শুরু হয়েছে। জুলাইয়ের প্রথম ১১ দিনের মধ্যে সাতদিনেই দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের হার ২ লাখ ছাড়িয়েছে। বাকি চারদিন ছিল ২ লাখের কাছাকাছি। গড় হিসাব করলে প্রতিদিন আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ মানুষ। অথচ জুলাই মাসেও করোনার গড় সংক্রমণের হার ছিল দেড় লাখের নিচে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতির দিনে দিনে অবনতি ঘটছে। আরও দ্রুত বিস্তার ঘটাচ্ছে মহামারী এই ভাইরাস। তাই বিশ্বের সরকারগুলোকে করোনা প্রতিরোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্ব সংস্থা বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে যে রোগী শনাক্ত হয়েছে এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে কয়েকটি দেশে। এরমধ্যে রয়েছে শীর্ষ সংক্রমিত তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও ভারত। তালিকায় আরেকটি নাম হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানেও সংক্রমণ বাড়ছে খুব দ্রুতই। ডব্লিউএইচওর দেয়া হিসাব অনুযায়ী, এতদিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছিল গত ৪ জুলাই। ওইদিন বিশ্বজুড়ে সর্বোচ্চ ২ লাখ ১২ হাজার ৩২৬ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন। এরপর তা আরও বাড়ছেই। দৈনিক মৃত্যুর গড় হার পাঁচ হাজারের নিচে রয়েছে। বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের সঙ্গে তুলনায় মৃত্যু অতটা না বাড়লেও মৃতের সংখ্যা একটু একটু করে বাড়তির দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। গত জুনেও দৈনিক গড়ে দেড় লাখের কম রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন সাড়ে ৪ হাজারের কিছু বেশি। চলতি মাসে তা যে বাড়তে শুরু করেছে প্রথম দশ দিনের হিসাবেই সেটা স্পষ্ট।