একসময় পাটকে বলা হতো ‘সোনালি আঁশ’। আর সেই সোনালি আঁশের প্রধান জোগানদার ছিল এই বাংলাদেশ। রমরমা ছিল পাটের ব্যবসা। দিন-রাত চলত পাটকলগুলো। কিন্তু প্লাস্টিকপণ্য আর কৃত্রিম আঁশের প্রচলন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী পাটপণ্যের চাহিদা কমে যায়। হারিয়ে যায় পাটের সেই সুদিন। বন্ধ হয়ে যায় দেশের প্রধান পাটকলগুলো। কিছু পাটকল বিক্রি করে দেওয়া হয় ব্যক্তি খাতে। নব্বইয়ের দশকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিতে থাকেন। পাট খাতে গবেষণাকে উৎসাহিত করতে থাকেন। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পাটের জিনোম আবিষ্কার করেন। পাটের উন্নত জাত আবিষ্কারের কাজ শুরু হয়। বন্ধ পাটকলগুলো আবার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। মাঝখানে ক্ষমতায় না থাকার কারণে সেসব উদ্যোগ অনেকটাই ব্যাহত হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় আসার পর পাট খাত পুনরুদ্ধারে আবারও মনোনিবেশ করেন তিনি। বন্ধ পাটকলগুলো আবার চালু করেন। কিছু শিল্পে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকপণ্য বর্জনের আন্দোলন শুরু হয়। এসব কারণে দেশে ও বিদেশে পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় হারিয়ে যাওয়া পাট চাষ নতুন উদ্যম পায়। কিন্তু এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছিল না আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল। প্রায় শতাব্দীপ্রাচীন এই পাটকলগুলোর যন্ত্রপাতি দিয়ে যে উৎপাদন হয়, তাতে পাটকলগুলোকে কোনোভাবেই লাভজনক করা যাচ্ছিল না। বছরের পর বছর লোকসানি পাটকলগুলোকে ভর্তুকি দিয়ে চালানো হচ্ছিল। এ অবস্থায় সরকার পাটকলগুলোকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তারই প্রথম ধাপ হিসেবে পাটকলগুলো বন্ধ করা হয়েছে। প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন সম্পন্ন করা হবে এবং পাটকলগুলো আবার চালু করা হবে। আমরা মনে করি, সরকারের এই উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী।
আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে এগিয়ে যেতে না পারলে কোনো শিল্পের পক্ষেই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। প্লাস্টিকপণ্য বর্জনের কারণে অনেক দেশেই পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। সেসব দেশে মানসম্মত পণ্য রপ্তানি করা গেলে অবশ্যই পাটের সুদিন আবার ফিরে আসবে। আর তার জন্য পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে জরুরি হচ্ছে আধুনিক কারখানায় কাজ করার জন্য দক্ষ লোকবল তৈরি করা। প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা রয়েছে।