সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
প্রচÐ রোদ আর তাপদাহের মধ্যে জমিতে লাগাতার কাজ করে যাচ্ছেন হাওর অঞ্চলের কৃষকেরা। বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় দ্রæত ফসল তুলতে ব্যস্ত তারা। তবে কাজের ফাঁকে ছায়ায় একটু বিশ্রামের সুযোগ নেই তাদের; যার পরিপ্রেক্ষিতে ছাউনি নির্মাণের দাবি তুলেছেন কৃষক ও কৃষিশ্রমিকরা।
জগন্নাথপুরের সর্ববৃহৎ নলুয়া হাওরে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে ধান কাটার কাজ করছেন শ্রমিকরা। সেখানে তীব্র রোদের মাঝে বসেই ক্লান্তি ঝরাতে পানি পান করছেন এক শ্রমিক। টানা ৬ ঘণ্টা হাড়ভাঙা খাটুনির পর একটু বিশ্রামের স্থান না থাকা নিয়ে অভিযোগ করলেন আব্দুস শহিদ নামের ওই শ্রমিক। বললেন, উপায় না পেয়ে গা জ্বালানো রোদেই বসেছেন একটু পানি আর খাবার খাওয়ার জন্য। আব্দুস শহিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বোরো ধান কাটার জন্য তারা ২০ জন শ্রমিক নাটোর থেকে জগন্নাথপুরে এসেছেন। বিশাল এ হাওরের ধারেকাছে কোনো বিশ্রামের জায়গা নেই। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি বা বজ্রপাত, যাই হোক না কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের মাঠে কাজ করতে হচ্ছে। তাঁর মতো কয়েকশ কৃষক ও শ্রমিক এভাবেই এখানে কাজ করেন প্রতিবছর। বিভিন্ন কাজে সরকারের নানা পদক্ষেপ থাকে। কৃষি ও কৃষকবান্ধব এ সরকারের কাছে বিশ্রামের জন্য ছাউনি স্থাপনের আবেদন জানান তিনি।
এদিকে শ্রমিকদের এমন অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আরও আগে থেকেই বিশ্রামাগার বা ছাউনি
নির্মাণের দাবি তুলেছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কৃষক ও জমিতে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের সুরক্ষা ও বিশ্রামের জন্য সুযোগ করে দিতে হাওরে কৃষক ছাউনি নির্মাণ করা উচিত।
সম্প্রতি নলুয়া হাওরে বোরো ধান কর্তন উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও এ দাবি তুলেছিলেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলার ধান চাষের সবচেয়ে বড় উৎস জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওর। এ হাওর উপজেলার চিলাউড়া-হলিদপুর, কলকলিয়া ইউনিয়ন ও পৌরসভার এলাকা ছাড়াও দিরাই এবং ছাতক উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আয়তনের এ হাওরে আবাদকৃত জমির পরিমাণ ৪ হাজার ৪১০ হেক্টর। চলতি বোরো মৌসুমে ওই হাওর থেকে প্রায় ২৮ হাজার ৩২০ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। তবে এই বিশাল অংশে কৃষকদের জন্য নেই কোনো বিশ্রামাগার বা বৈরী আবহাওয়ায় আশ্রয় নেওয়ার মতো স্থান।
কৃষকরা জানান, বিশাল এ হাওরজুড়ে নেই বিশ্রামের নির্দিষ্ট কোনো স্থান। প্রচÐ গরম, ঝড়বৃষ্টি কিংবা বজ্রপাতের সময়ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষকদের হাওরে কাজ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ঘটে প্রাণহানি। এ সব প্রতিক‚ল অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে ও বিশ্রামের সুযোগ করে দিতে হাওরের বুকে ‘কৃষক ছাউনি’ নির্মাণের দাবি জানান কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষক দিলদার মিয়া জানান, ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতের ভয় থাকলেও তাদের কোনো আশ্রয় নেই। খোলা মাঠে কাজ করতে হয়। এতে মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। কোথাও একটু নিরাপদ আশ্রয় থাকা দরকার কৃষকদের জন্য। নলুয়ার হাওরে দু’একটি ছাউনি নির্মাণ করা হলে নিরাপদে বিশ্রাম নিতে পারতেন কৃষকরা। আরেক কৃষক সুনীল দাস জানান, কৃষক ছাউনি নির্মাণ করা হলে হাওরের কৃষকরা বজ্রপাতের সময় আশ্রয় নিতে পারবেন। বিশ্রামের নির্দিষ্ট স্থান পাবেন। একটু শান্তিতে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন। রোদ-বৃষ্টিতে হাওরের খোলা আকাশের নিচে বসে খাওয়া-দাওয়া করতে হয়।
চিলাউড়া-হলিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম বকুল জানান, কৃষকরা সাধারণত সারাদিন মাঠে কাজ করেন। দুপুরে বাড়ি যাওয়ার সময় পান না। রোদ কিংবা বৃষ্টিতে নিরাপদে বসার কোনো জায়গা নেই। হাওরগুলোতে যদি ছাউনি নির্মাণ করা হয় কৃষকেরা খুবই উপকৃত হবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ জানান, প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। এটি মর্মান্তিক। হাওরে যদি ছাউনি নির্মাণ করা হয় তাহলে এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় তারা আশ্রয় নিতে পারবেন।
এদিকে ১৮ এপ্রিল নলুয়ার হাওরে বোরো ধান কর্তন উৎসবে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপির কাছে কৃষকদের পক্ষ থেকে ছাউনি নির্মাণ ও নলক‚প স্থাপনের দাবি জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমদ। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন এমপি।